খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন নেই ঠিকই, কিন্তু হাসপাতালের ঘর দখল করে ঋণ সমবায় চলছে কী করে? কিছু চিকিৎসক মেডিক্যাল শংসাপত্র দিতেও টাকা নিচ্ছেন। দুর্ব্যবহার করছেন রোগীদের সঙ্গে। কেন? বুধবার বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সামনে এমনই বেশ কিছু প্রশ্নের মুখে পড়লেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়া ওই স্থায়ী কমিটিতে ছিলেন মোট ছ’জন বিধায়ক। তাঁরা হলেন, রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, নির্মল মাঝি, শশি পাঁজা, সুকুমার দে, সুনীল মণ্ডল ও অরূপ খান। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন মহকুমা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা মহকুমাশাসক আয়েষা রানি এ, হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস, হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী প্রমুখ। হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা বিভিন্ন অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যদের কাছে। তবে রোগীদের জন্য বরাদ্দ দুপুরের খাবারের মান পরীক্ষা করে সন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি। |
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান। |
হাসপাতালের কর্মীদের সুবিধার্থে ১৯৯৫ সালে গড়ে ওঠে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্মচারী ঋণ সমবায়। শুরু থেকেই বোর্ড লাগিয়ে হাসপাতালের একটি ঘর নিয়ে চলছিল সমবায়ের কাজকর্ম। এ দিন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নজরে পড়ে বিষয়টি। ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, ঘরটিতে পাঁচশোরও বেশি প্রেসার কুকার মজুত রয়েছে। কমিটির সদস্য নির্মল মাজির মন্তব্য, “ক্রেডিট সোসাইটি তার কাজ করুক। কিন্তু এ ভাবে হাসপাতালের ঘর দখল করে করা যায় না।” তাঁর কথায়, “রোগীরা অনেক সময়ে শয্যা পান না। ওই ঘরে কয়েকটি শয্যা রাখার ব্যবস্থা করা হলে তা রোগীদেরই কাজে আসবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মীর দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই ক্রেডিট সোসাইটির নাম করে হাসপাতালের কিছু কর্মী নিজেদের পকেট ভরছেন। এ বার পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা তাঁর।
সম্প্রতি হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল ঘোষের বিরুদ্ধে এক বয়স্ক রোগীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগে রোগীর পরিজনেরা জানান, ওই রোগী রক্তবমি করলে তার ছিটে লাগে গোপালবাবুর জামায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই রোগীর গালে চড় মারেন। আগে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মেডিক্যাল শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগও জমা পড়েছিল। এ দিন স্থায়ী কমিটির সামনে প্রসঙ্গটি ওঠে। কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, কোনও ভাবেই চিকিৎসকদের এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। যে সমস্ত চিকিৎসক এ সব কাজে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেবে কমিটি। সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “কমিটির পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুপুরে বিধায়ক দল আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে যায়। আড়াই ঘণ্টা ধরে রোগী, চিকিৎসক, কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। রোগীরা হাসাপাতালে পরিকাঠামোগত কিছু উন্নয়নের দাবি জানান। ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় সমস্যা হয় বলে অভিযোগ করেন কিছু রোগী। পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিকে হাসপাতালে ‘ট্রমা সেন্টার’ গড়ার কাজ কবে শেষ হবে তা জিজ্ঞাসা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যেরা। ওই প্রতিনিধি জানান, টাকা না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কমিটির সদস্যেরা সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “ট্রমা সেন্টারের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৮০ লক্ষ টাকা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর তা সেন্টার গড়ার কাজে দিতে বললে, দিয়ে দেওয়া হবে।” হাসপাতালে পরিদর্শনের সময়ে চিকিৎসক ও কর্মীদের আসা-যাওয়া এবং ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম নজরে পড়ে বিধায়কদের। কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্তকুমার আইকত, সিএমওএইচ দিলীপ মণ্ডল, এসিএমওএইচ অরিতা সেন চট্টোরাজের সঙ্গে ওই বিধায়ক দলের একটি বৈঠক হয়। সেখানে তাঁরা সুপারকে কোনও ‘চাপের কাছে মাথা নত না করে’ নির্ভয়ে কাজ করতে বলেন বলে জানা গিয়েছে। সুপার বলেন, “হাসপাতালে এখন ২৯০টির বেশি শয্যা রয়েছে। আরও ২৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে। এই হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উত্তীর্ণ করা হবে বলেও ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এখনই অন্তত ৭ জন বিশেষজ্ঞ-সহ ১৫ জন ডাক্তার, কমপক্ষে ১০ জন কর্মী, ৯ জন নার্স, ৭০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রয়োজন। বৈঠকে এ ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছি।” স্থায়ী কমিটির আশ্বাস, বিজ্ঞপ্তি জারির পরিকল্পনা হয়েছে। শীঘ্রই কর্মী নিয়োগ হবে। |