সিঙ্গুরে পঞ্চায়েতে তখন তৃণমূল। এলাকার বিধায়কও ওই দলের। কারখানার জন্য সেখানকার জমি নেওয়াটা ভুল হয়েছিল বলে এ দিন নিজেদের ভুলের বিশ্লেষণ করলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। তবে শিল্পপতিদের সঙ্গে বামেদের আঁতাতের অভিযোগটি এ দিন সরাসরি খারিজ করে দেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলের পরে এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। যেখান থেকে এই পালাবদলের সূচনা, সেই সিঙ্গুরের জমি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেমন অস্বস্তিতে রয়েছে, তেমনই সিঙ্গুর-প্রশ্ন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বকে। দিল্লিতে আজ সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কারাটকে।
সিঙ্গুরে যে ভুল হয়েছিল, তা আগেই স্বীকার করেছে সিপিএম। কিন্তু আজ দিল্লিতে এ দেশে বামেদের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এক আলোচনায় প্রশ্ন উঠল, শিল্পপতিদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বের আঁতাত তৈরি হয়েছিল কি না? সেখানেও কোনও দুর্নীতি ছিল কি না? আর বামপন্থী বিশিষ্টজনদের এই প্রশ্নের মুখে পশ্চিমবঙ্গ নেতৃত্বকে বুক দিয়ে আগলালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। জানিয়ে দিলেন, শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় ভুল হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আর যা-ই হোক, রাজ্যের সিপিএমের নেতাদের সঙ্গে শিল্পপতিদের কোনও আঁতাত ছিল না। ভুল হয়েছিল ওই কারখানার জন্য সিঙ্গুরকে বেছে নেওয়া। কারাট বলেন, “এটা আমাদের দল। আমরা কোনও রাজ্য নেতৃত্বকেই দোষ দিতে চাই না।”
সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক কৃষক’-দের জমি ফেরত দিতে গিয়ে আইনি জটিলতায় আটকে পড়েছে মমতার সরকার। ক্ষমতায় এসেই মমতা প্রথমে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে নিতে আইন করেছিলেন। কিন্তু সেই আইন কার্যকর করতে গিয়ে এখন কলকাতা হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। কারাট আজ দাবি করেন, “সিঙ্গুরে ৮০ শতাংশ মালিকই জমি দিতে সম্মতি জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিলের খসড়াতেও বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ জমির মালিকের সম্মতি থাকলে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে।” একই ভাবে নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রেও ভুলটা ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক’ স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল বলে কারাটের দাবি। তাঁর বক্তব্য, পেট্রোরসায়ন তালুক, তা-ও আবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প, তার জন্য অতখানি জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই সমস্যা তৈরি হয়।
দলের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি নিয়েও এ দিন বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কারাটকে। অভিযোগ ওঠে সিপিএমে কোনও গণতন্ত্র নেই। সম্প্রতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা প্রসেনজিৎ বসু গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারাট যুক্তি দেন, সিপিএমের পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক সময় সাধারণ সম্পাদকের মতামতই খারিজ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের প্রশ্নে এমনটা হয়েছিল। তার পরেও অনেক বার এমন হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি বর্জন করলে জনসমর্থনও ধাক্কা খাবে। উদাহরণ দিয়ে কারাট বলেন, “ইউরোপেও গ্রিস বা পর্তুগালের মতো যে সব দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি মেনে চলে, তারাই জনসমর্থন ধরে রাখতে পেরেছে।” |