প্রবন্ধ ২...
‘যদি আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেন, সেটা এর চেয়ে ভাল হবে’
জ, বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’। আজ, আরও এক বার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের দিন। নানা সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরও এক বার মনে করিয়ে দেবে, সমাজের ‘মূল স্রোত’ এই প্রান্তিক মানুষগুলোকে ‘আমাদের লোক’ বলেই জানে!
এ রকম এক ‘আমাদের লোক’ হলেন সোনি সোরি। শিক্ষিকা। বয়েস বছর পঁয়ত্রিশ। তিনি অবশ্য ঠিক মূল স্রোতে নেই। এই মুহূর্তে বন্দি, রায়পুর সেন্ট্রাল জেলে। মাওবাদীদের সঙ্গে সংশ্রব রাখা ও তাঁদের সাহায্য করার অভিযোগে সোনি ও তাঁর ২৫ বছরের ভাইপো, সাংবাদিক লিঙ্গারাম কোড়োপিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন’ (ইউ এ পি এ) এবং ‘ছত্তীসগঢ় বিশেষ জনসুরক্ষা আইন ২০০৫’-এর বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ করে পুলিশ। দীর্ঘ দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আশা কার্যত শেষ হয়ে যায় তাঁদের।

ছত্তীসগঢ়ের বস্তারের আদিবাসী মেয়ে সোনিকে পুলিশ গ্রেফতার করে ২০১১’র ৪ অক্টোবর। সে সময় সোনির গ্রামের বাড়িতে মায়ের মুখ চেয়ে বসে তাঁর ৫, ৮ ও ১২ বছরের তিনটি সন্তান। তাঁর বাবা তখন জগদলপুর হাসপাতালে ভর্তি। ইতিহাসের পরিহাস, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এই সন্দেহে মাওবাদীরাই সোনির বাবাকে গুলি করেছিল। তাঁর স্বামীকে মাওবাদী সন্দেহে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করে।
দিনকয়েক আগে, ২৮ জুলাই রায়পুর সেন্ট্রাল জেল থেকে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি’র নামে একটি চিঠি লিখেছেন সোনি। বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেয়, সেটাও বর্তমান পরিস্থিতির থেকে ভাল হবে। আদিবাসী এই নারী লিখছেন, ‘আপনার আদেশের জন্যই আমি আজ বেঁচে। আমার যাতে শারীরিক পরীক্ষা হয় তার জন্য আপনি ঠিক সময়ে আদেশ দিয়েছিলেন।’
এখানে একটা কথা বলা দরকার। পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়েই তাঁর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন সোনি সোরি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স-এ তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়। কোর্টের আদেশেই এর আগে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিরপেক্ষ ভাবে তাঁর যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়।
আমাদেরই লোক? ‘মৃগয়া’ ছবির একটি দৃশ্য।
সোনি অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১’র ৮ ও ৯ অক্টোবর রাতে দান্তেওয়াড়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে অকথ্য অত্যাচার চালায় পুলিশ। ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়। কলকাতার হাসপাতালে পরীক্ষার সময়েই চিকিৎসকেরা দেখেন, সোনির যোনিপথ ও পায়ুছিদ্র দিয়ে অনেক ভিতরে পাথর ঢোকানো হয়েছে। সেই পাথর অবশ্য বার করতে সক্ষম হন তাঁরা। এন আর এস থেকে তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধের কথা লিখে দেওয়া হয়।
কিন্তু রায়পুর জেলে ফেরার পরে জেল কর্তৃপক্ষ সে সব কোনও ব্যবস্থাই করেননি বলে অভিযোগ আনেন সোনি। ক্রমে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই খবর জানার পরে এ বছরের জুনে সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে দিল্লির এইমস-এ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ছত্তীসগঢ় সরকারকে নির্দেশ দেয়।
কিন্তু পাঁচ সপ্তাহ এইমস-এ কাটিয়ে রায়পুর জেলে ফেরার পরে কী হল?
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে সোনি লিখছেন, ‘আমি এখন তার মূল্য দিচ্ছি। আমাকে এখানে হেনস্থা ও অত্যাচার করা হচ্ছে। আমাকে দয়া করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। মাননীয় বিচারপতি, আমি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আমাকে ‘নগ্ন’ করে মাটিতে বসানো হচ্ছে। অনাহারে আমি কষ্ট পাচ্ছি। তল্লাশির নামে আমার প্রতিটি অঙ্গ অস্বস্তিকর ভাবে স্পর্শ করা হয়। আমাকে দেশদ্রোহী ও নকশালবাদী বলে ওরা আমাকে অত্যাচার করে।’
সোনির জামাকাপড়, সাবান, সবই বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়েছে। তিন সন্তানের জননী, বস্তারের এই ভূমিকন্যা আরও লিখেছেন, ‘মাননীয় বিচারপতি, আরও কত দিন ছত্তীসগঢ় সরকার, পুলিশ প্রশাসন আমাকে নগ্ন করে রাখবে? আমি এক ভারতীয় আদিবাসী নারী! আমি লজ্জা পাই, এখানে আমার শালীনতা রক্ষা করতে পারি না।...আমি কী এমন অপরাধ করেছি যে আমাকে এ ভাবে অত্যাচার করা হবে?’ তাঁর প্রশ্ন, ‘আরও কত দিন আমি এই শারীরিক ও মানসিক অত্যচার সহ্য করব? যদি আমায় মৃত্যুদণ্ড দেন, সেটা এর থেকে ভাল হবে!’
আজ ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.