একটি নয়, দুটি দেশের সঙ্গে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়াহীন উন্মুক্ত সীমান্ত। দিনরাত মানুষ, পণ্য পারপার হচ্ছে। চলছে অবাধে ছোটবড় গাড়ি। নজরদারি সর্বত্র থাকলেও হাতেগোনা নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় মাত্র তল্লাশি এবং কাগজপত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এর সুযোগেই সীমান্তের গ্রামীণ এলাকা দিয়ে অনেকসময় সন্দেহভাজনেরা এপার-ওপার করছেন। ঢুকছে বেআইনি মালপত্রও। সরকারিভাবে এমন তথ্য প্রমাণ বহুবার সামনে উঠে এসেছে। সরকারি সূত্রের খবর, তিনদেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূণর্র্’ সম্পর্কের জন্য কাঁটাতারের বেড়ার সম্ভাবনাও অদূর ভবিষ্যতে নেই। ভারত-নেপাল এবং ভারত-ভুটান সীমান্তে এই ছবি অতি পরিচিত। এ বার দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ওই দুই দেশের সীমান্তে মোতায়েন সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) ক্ষমতা একধাপে অনেকটাই বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সম্প্রতি মন্ত্রকের তরফে জারি করা একটি নির্দেশে জানানো হয়েছে, ওই দুই দেশের সীমান্তে মোতায়েন এসএসবি সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে শুধু নজরদারি নয়, সন্দেহভাজন যে কাউকে তল্লাশি, কাগজপত্র পরীক্ষাও করতে পারবে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করতে পারবে এসএসবি। এতদিন এই দায়িত্ব কেবলমাত্র শুল্ক দফতর, পুলিশের উপরই ছিল। ভারতীয় পাসপোর্ট আইন-১৯৬৭ দুটি ধারায় ওই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এসএসবিকে। দিল্লিতে কর্মরত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, নেপাল এবং ভুটান সীমান্তে নজরদারির দায়িত্ব পুরোপুরি এসএসবি-র উপর রয়েছে। সেখানে সরকারিভাবে চিহ্নিত রুটের সংখ্যা হাতেগোনা। এর বাইরে সর্বত্র গ্রাম, মেঠোপথ এমনকি, নদী দিয়েই মানুষ যাতায়াত করে। সেখানে এসএসবি কাউকে আটকালে বা কোনও বাড়িতে হানা দিলে কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য শুল্ক দফতরে খবর দিতে হয়। পুলিশ আসে। সব মিলিয়ে প্রচুর সময় লেগে যায়। আপৎকালীন ক্ষেত্রে সময়টা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এর সুযোগ নানাভাবে নিয়ে থাকে অনুপ্রবেশকারী, সন্দেহভাজনেরা। অনেক সময় সেখানে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। রাতে ঘটনা ঘটলে ভোর অবধি অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে বেআইনি আটকের প্রশ্ন ওঠে। নতুন ক্ষমতায় এসএসবি নিজের মত পরীক্ষা, তল্লাশি এবং গ্রেফতারও করতে পারে। ওই আধিকারিকেরা কথায়, “এতে সীমান্তের নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়বে। এতে অবৈধ পারাপার, পাচারের প্রবণতাও কমবে।” উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম নিয়ে ইন্দো-নেপাল সীমান্তের পরিধি প্রায় ১৭৫১ কিলোমিটার। পাশাপাশি, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ মিনিয়ে ইন্দো-ভুটান সীমান্ত রয়েছে ৬৯৯ কিলোমিটার। ১৯৬৩ সালে ভারত-চিন যুদ্ধকে সামনে রেখে সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দাদের সজাগ, প্রশিক্ষিত এবং সাহায্যে জন্য এসএসবি তৈরি হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নেপাল সীমান্ত এবং ২০০৪ সালে ভুটান সীমান্তের দায়িত্ব এসএসবিকে আধা সামরিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই দুই সীমান্তের ‘লিড’ গোয়েন্দা সংস্থারও স্বীকৃতি দেয় এসএসবিকে। পটনা এসএসবি ফ্রন্টিয়ারের এক মুখপাত্র জানান, সীমান্ত সুরক্ষা, অপরাধ, চোরাচালান মত বিষয়গুলি দেখাই এসএসবি-র কাজ ছিল। এ জন্য দুই দেশের সীমান্ত জুড়ে ৫টি ফ্রন্টিয়ার তৈরি হয়েছে। বর্তমানে নেপাল সীমান্তে ৪৫০ টি সীমান্ত চৌকি, ভুটান সীমান্তে ১৩২টি চৌকি রয়েছে। এতদিন চৌকি থেকে সীমান্তে নজরদারি চলত। কোনও ঘটনা বা অপরাধ হলে সরসারি হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধানের কোনও অধিকার বা দায়িত্ব এসএসবি ছিল না। এবার তা দেওয়া হল। এসএসবি-র অফিসারেরা এবার থেকে সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোনও এলাকায় পরীক্ষা করতে পারবেন। নির্দিষ্ট ২২টি রুট ছাড়া অন্য পথে কাউকে এইভাবে পাওয়া গেলে গ্রেফতারও সম্ভব। তবে অফিসারকে ন্যূনতম সাব ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার হতে হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। |