জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা |
যাত্রী-নিগ্রহে সাসপেন্ড ৩ আরপিএফ জওয়ান |
হাওড়া স্টেশনে এক যুবক যাত্রীকে আটকে রেখে ‘অমানবিক ভাবে’ মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে আরপিএফ। ওই ঘটনায় বুধবার আরপিএফের তিন জওয়ানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় রেল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে রেল পুলিশ।
বিভাস পাল নামে শ্রীরামপুরের এক যুবককে মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনে আরপিএফের দফতরের একটি ঘরে প্রায় আট ঘণ্টা আটকে রেখে বেদম মারধর করার অভিযোগ ওঠে আরপিএফের কয়েক জন অফিসার ও কর্মীর বিরুদ্ধে। বিভাসের বাবা বিমলকুমার পাল রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে রেলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে বুধবার নতুন কমপ্লেক্সে আরপিএফ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই তরুণকুমার বিশ্বাস, এএসআই এ রজক ও হেড কনস্টেবল উত্তম দেবনাথকে সাসপেন্ড করেন আরপিএফের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
আরপিএফের পক্ষ থেকে এ দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়। হাওড়া স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরপিএফের সিনিয়র কম্যাড্যান্ট অরোমা সিংহ ঠাকুর বলেন, “অমানবিক ভাবে যুবককে আটকে মারধর করা হয়েছে। এই ঘটনায় আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে তিন জনকে। যুবকটিকে কেন এ ভাবে মারধর করা হল, তার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
আহত যুবকের বাবা বিমলবাবু হাওড়া জিআরপি থানায় অভিযোগ করেন, জলেশ্বর থেকে ফেরার পথে জগন্নাথ এক্সপ্রেসে সংরক্ষিত আসন না-পেয়ে তাঁর ছেলে সাধারণ কামরায় ওঠেন। প্রতিবন্ধী আসনে বসে ট্রেনে ভ্রমণ করার ‘অপরাধ’-এ বিভাসকে জোর করে হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দোতলায় আটকে রাখা হয় আরপিএফের একটি ঘরে। সেখানে প্রথমে তাঁর কাছ থেকে ৫০০ টাকা, মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। বিমলবাবুর অভিযোগ, তার পরেই বিভাসের দু’হাত ঘাড়ের পিছন দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি চেয়ারে বসিয়ে মোটা লাঠি দিয়ে পায়ের পাতায় ও শরীরের অন্যান্য অংশে বেদম আঘাত করা হয়। এই ধোলাইয়ে তাঁর পায়ের পাতা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। কালশিটে পড়ে যায় দেহের বিভিন্ন জায়গায়।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত তাঁর ছেলের উপরে আরপিএফের এই ‘থার্ড ডিগ্রি’ চলে বলে বিমলবাবুর অভিযোগ। বেধড়ক মারধরে বিভাস অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে আরপিএফের অফিস থেকে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়। হাঁটার ক্ষমতা না-থাকায় তিনি দীর্ঘ ক্ষণ প্ল্যাটফর্মেই পড়ে থাকেন। পরে অন্য এক যাত্রীর মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করেন। বিমলবাবুই ফোন ধরেন। সব শুনে তিনি কলকাতায় বিভাসের এক বন্ধুকে খবর দেন। সেই বন্ধু সন্ধ্যায় হাওড়া স্টেশনে গিয়ে বিভাসকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। তার পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে পৌঁছন। বিমলবাবু রেল পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নতুন কমপ্লেক্সের আরপিএফ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই তরুণকুমার বিশ্বাস এবং অন্য দুই জওয়ানের কথা উল্লেখ করেন।
বিভাসের অভিযোগ, আরপিএফ জওয়ানেরা তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিল। টাকা না-দেওয়ায় আটকে রেখে শুরু হয় প্রহার। বুধবার হাওড়া রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস বলেন, “আরপিএফের কম্যান্ড্যান্টের কাছে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির করতে নোট দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |