সূর্যের থেকেও তিনশো গুণ বড়! ২০১০-এ এমন চার দৈত্যাকার নক্ষত্রের খোঁজ পায় নাসা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন ওঠে, সত্যি এত বড় নক্ষত্র মহাকাশে রয়েছে? কী ভাবে? তারই উত্তর দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সহকর্মীরা। সেই সঙ্গে সমাধান করলেন দানব তারার জন্মরহস্য। রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির ‘মান্থলি নোটিস’ পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হতে চলেছে।
২০১০ সালে ‘আর১৩৬’ নামে এক নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে চারটি বিশাল নক্ষত্রের সন্ধান পায় নাসা। তার আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতেনই না এত বড় নক্ষত্রের অস্তিত্ব রয়েছে। আমাদের আকাশগঙ্গা (মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি)-সহ বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন সূর্যের থেকে সর্বাধিক ১৭০ গুণ বড় নক্ষত্র রয়েছে মহাকাশে। কিন্তু সে তথ্য নস্যাৎ হয়ে যায় ২০১০-এ। এর পরেই জার্মানির বন ইউনিভার্সিটিতে দানব নক্ষত্রের জন্মরহস্য নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। গবেষক দলটিতে যোগ দেন কলকাতারই ছেলে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্র সম্বরণ। বন ইউনিভার্সিটির আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো ২০০৮ থেকেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্সি থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ে যান সম্বরণ। সেখানে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টালে পিএইচডি করেন। এর পরেই সম্বরণের জার্মানি যাত্রা। |
সহকর্মীদের সঙ্গে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র |
নতুন তথ্য অনুযায়ী, দু’টি ছোট নক্ষত্র অনেক সময় পরস্পরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের মধ্যে ধাক্কা খায়। এবং তার পর জুড়ে যায় একে অপরের সঙ্গে। আর এ ভাবেই তৈরি হয় একটি বড় তারা। সাংবাদিকদের কাছে সম্বরণ বলেন, “ভাবুন, দু’টি তারা নিজেদের খুব কাছ দিয়ে একে অপরের চারপাশে ঘুরছে। আবার পড়শি তারাদের টানে নিজেদের মধ্যে সব সময় একটা দূরত্ব রেখেও চলছে। কিন্তু কোনও কারণে যদি নিজেদের মধ্যে টান বেড়ে যায়, বিপত্তি বাধে তখনই। দু’দিকের টান সামলাতে না পেরে এক বার দু’জনের ধাক্কা লাগলেই জুড়ে গিয়ে তৈরি হয় এক দৈত্যাকার নক্ষত্র।”
কিন্তু বললেই তো আর হবে না। হাতেনাতে প্রমাণ চাই।
প্রমাণও দিয়েছেন সম্বরণরা। ধূলো আর ধোঁয়ার মেঘে তৈরি ট্যারেন্টুলা নেবুলার মধ্যে ‘আর১৩৬’ নক্ষত্রপুঞ্জে চার নক্ষত্রদৈত্যের সন্ধান পেয়েছিল নাসা। সেই ‘আর১৩৬’-র ধাঁচেই কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন তাঁরা। ১ লক্ষ ৭০ হাজার নক্ষত্রের ওই মডেলে বিজ্ঞানীরা দেখান কী ভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে চলেছে নক্ষত্রপুঞ্জে। কী ভাবে তারায়-তারায় সংঘাতে তৈরি হচ্ছে তারাদের দৈত্য। আর এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাঁরা সমাধান করেছেন প্রায় ৫ লক্ষ জটিল অঙ্কের।
সম্বরণ নিজেই বলছেন, তারাদের পরিবারের রহস্য সমাধান করা খুবই কঠিন। তাঁর কথায়, “তারায়-তারায় সংঘাতের পিছনে পদার্থবিদ্যার বহু জটিল সমীকরণ রয়েছে। ট্যারেন্টুলার নক্ষত্রদৈত্য সে তুলনায় অনেক সহজবোধ্য বিজ্ঞান।” |