এক গাড়ি চালককে মারধরের অভিযোগ উঠল মালদহের এক বিডিওর বিরুদ্ধে। তাঁর স্ত্রীও ওই চালককে চড় মেরেছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজার সেরে বাড়ি ফেরার পথে সোমবার দুপুরে কালিয়াচক থানার সামনেই যানজটে আটকে পড়েন কালিয়াচক ১-এর বিডিও তমোজিৎবাবুর স্ত্রী’র গাড়ি। তাঁদের সামনেই ছিল ওই গাড়িটি। তমোজিৎবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী যানজটে আটকে যান। তাঁর পথ জুড়ে দাঁড়িয়েছিল অন্য একটি গাড়ি। সেই গাড়ির চালককে আমার স্ত্রী তখন একটু সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। যাতে আমাদের গাড়িটি তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই সামান্য কারণ নিয়েই ওই গাড়ির চালক আমার স্ত্রীকে গালিগালাজ করতে থাকেন। তিনি আমার স্ত্রীকে মারধরও করেছেন।”
তমোজিৎবাবু জানান, তিনি তখন নিজের দফতরেই ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী কোনওমতে মোবাইলে সব কথা জানাতেই দফতর থেকে ঘটনাস্থলে চলে যাই। তখন আমি ঘটনার প্রতিবাদ করাতে উল্টে ওই চালক আমার উপরেও চড়াও হন।”
ওই গাড়ির চালক গৌতম ত্রিবেদীর অবশ্য বক্তব্য, “বিডিও সবই মনগড়া অভিযোগ করছেন।” তাঁর কথায়, “যানজটে অনেকক্ষণ আটকে ছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একজন মহিলা হাতের ইশারা করে আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে গাড়ি সরাতে বলেন। কিন্তু যানজটে কীভাবে গাড়ি সরাব?
সে কথা বলতেই ওই মহিলা সোজা এসে সকলের সামনে আমার গালে সপাটে চড় মারেন।” গৌতমবাবুর কথায়, “এরপরে ওই মহিলা নিজের পরিচয় দেন একজন বিডিও’র স্ত্রী হিসেবে। মোবাইলে আমার ছবিও তোলেন। তার পরে তিনি ফোন করে তাঁর স্বামীকে ডাকেন। ওই বিডিও নিজেও এসে তখন আমাকে জামার কলার ধরে মারধর করেন।”
গৌতমবাবু ওই দিন রাতে থানায় তমোজিৎবাবু এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর করা, হুমকি দেওয়া ও গালিগালাজ করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তমোজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, “আমরা কাউকে মারধর, গালিগালাজ করিনি।”
তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেই দিন আরও রাতে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে তাঁদের মারধর ও গালিগালাজের অভিযোগ করেছেন। মালদহ জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি।”
গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, “প্রথমে পুলিশের একটি অংশ মামলা না করে উল্টে ওই দু’জনের কাছে আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।” পুলিশ সুপার জয়ন্তবাবু বলেন, “এই বিষয়টিও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিন কালিয়াচক থানায় এই বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের জেলা সভাপতি মানব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিডিও এবং স্ত্রী অন্যায় ভাবে ওই চালককে মারধর করেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে গাড়ির চালকেরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবেন।”
ব্লক তৃণমূল সভাপতি মোজাহার হোসেন বলেন, “বিডিও ও তাঁর স্ত্রী লালবাতি, হুটার বাজিয়ে জেলায় ঘোরেন। প্রথমে চালকের অভিযোগ বিডিও-র চাপে নেওয়া হচ্ছিল না। আমরা এগিয়ে আসতেই মামলা করা হয়েছে।” |