তরুণীর চিকিৎসায় সাহায্য হুগলি জেলা পুলিশের
ঝুপ করে একদিন অন্ধকার নেমে এল দু’চোখ জুড়ে। চেনা পরিবেশটা ঝাপসা হয়ে এল।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পাশ করেও অধরা রইল সরকারি চাকরি।
ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়েটাও ভেস্তে গেল।
কোপ পড়ল বোনের পড়াশোনাতেও। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই জটিল ‘সেরিব্র্যাল থ্রম্বোসিস’ রোগটা যেন মেয়েটার জীবনটাই ওলোটপালট করে দিল। বাড়ির লোকজন মনে করেন, ‘চিকিৎসা বিভ্রাট’-এর কারণেই ঘটেছে যাবতীয় বিপত্তি।
তবে, লড়াই ছাড়েনি হুগলির ভদ্রেশ্বরের লাইব্রেরি রোডের মুখোপাধ্যায় পরিবার। মেয়েটির চোখে আলো ফেরাতে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। যে পুলিশের সম্পর্কে নানা ভয়ভীতি সাধারণ মানুষের। থাকে নানা অভিযোগ।
মেয়েটির নাম দেবলীনা মুখোপাধ্যায়। বছর তিরিশের ওই তরুণী ২০০৫ সালে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। হায়দরাবাদের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজিতে প্রশিক্ষণও নিচ্ছিলেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে অবশ্য জীবনের ছন্দটা হারিয়ে যেতে থাকে একটু একটু করে। সর্দি-কাশি এবং বমির উপসর্গ নিয়ে ওই দিন চন্দননগরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় দেবলীনাকে। তাঁর বাবা সমরকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেই থেকেই ভুল চিকিৎসার শুরু। মেয়ের স্পন্ডিলোসিসের চিকিৎসা করে ওরা। এত ইঞ্জেকশন আর ওষুধ দেয় যে মেয়ের চোখমুখ ফুলে যায়। ঘাড়ে বালির বস্তা দিয়ে ট্র্যাকশন দেয়।” সমরকুমারবাবু জানান, দু’দিন পরে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করানো হয় দেবলীনাকে। নার্সিংহোমটি প্রথমে পর্যবেক্ষণে রাখে মেয়েটিকে। সেখানেই ২৯ মার্চ সকাল থেকে চোখের দৃষ্টি চলে যায় তাঁর। তখন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ আনা হয়। এমআরআই করা হয়। শেষে জানানো হয়, মেয়ের চোখে দৃষ্টি ফিরবে না।
সমরবাবুরা অবশ্য হাল ছাড়েননি। দিন কয়েকের মধ্যেই দেবলীনাকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে যান তাঁরা। শারীরিক জটিলতা আরও বাড়ে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাশ করার খবর পান। তবে মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারেননি। বেঙ্গালুরু থেকে হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বলা হয় চোখের স্নায়ু শুকিয়ে গিয়েছে। অ্যালোপ্যাথিতে ফল মিলবে না। কলকাতায় এসে নামী দুই চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। তাঁরাও কার্যত একই কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত, ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে কেরালায় একটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় দেবলীনাকে। সেই থেকে ৫ বার দেখানো হয়েছে ওই হাসপাতালে। আরও বেশ কয়েকবার যেতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ সবের মধ্যেই তাঁরা খোঁজ পান, পুনের ‘চৈতন্য স্টেম সেল সেন্টার’-এর। তাঁদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছে পরিবারটি। সেখানে ‘স্টেম সেল থেরাপি’র মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরতে পারে বলে তাঁদের আশা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ওই চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকারও বেশি প্রয়োজন।
এই বিপুল খরচ কী ভাবে জোগাড় করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না দেবলীনার বাবা-মা। সমরকুমারবাবু একটি বেসরকারি মোটর কারখানায় চাকরি করতেন। বছর ন’য়েক আগে স্বেচ্ছাবসর নেন। জমানো কয়েক লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই নিঃশেষ। দেবলীনার বিয়ের জন্য জমানো টাকাও শেষ। বিভিন্ন সরকারি দফতরে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন সমরবাবুরা। কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি।
এই ভাবেই একদিন তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর কাছে। তন্ময়বাবু তাঁদের নিরাশ করেননি। তাঁর নির্দেশে হুগলির বিভিন্ন থানা দেবলীনার চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মাও আলাদা করে অর্থ সংগ্রহ করছেন। দেবলীনার মা শুচিতাদেবী জানান, জেলা পুলিশের তরফে প্রায় ২ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের হাতে। শুচিতাদেবী বলেন, “পুলিশ সম্পর্কে অনেকের ভীতি থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে গেল। ওঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে, এই টাকাও অপ্রতুল মেয়ের চিকিৎসায়। আরও বহু টাকা প্রয়োজন। কিন্তু কে দেবে? এ সব চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারি না।”
দেবলীনার চাকরি না পাওয়ার বিষয়টিও চিন্তায় রেখেছে তাঁদের। দেবলীনা বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ নানা জায়গায় চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কিছুই হল না।” শিক্ষা দফতরের এক অফিসারের কথায়, “স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসার সময় ওই তরুণীর দৃষ্টি ঠিক ছিল। ফলে পরীক্ষায় পাশের পর তিনি কী ভাবে দৃষ্টিহীন বলে বিবেচিত হবেন। এ নিয়ে নিয়মের জটিলতা রয়েছে।”
পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “পরিবারের তরফে আবেদন করা হয়েছিল। পুলিশ সেই আবেদনে মানবিক কারণে সাড়া দিয়েছে। তবে মেয়েটির চোখ ভাল হলেই তবেই আমরা পুরোপুরি খুশি হতে পারব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.