সার্কিট বেঞ্চ কত দ্রুত হবে, কেন্দ্রের কোর্টে বল মন্ত্রীর
লপাইগুড়িতে কত দ্রুত সার্কিট বেঞ্চ হবে তা কেন্দ্রের উপরে নির্ভর করছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে প্রস্তাবিত সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী পরিকাঠামো পরিদর্শন করতে দিয়ে এ কথা জানান রাজ্যের আইড়মন্ত্রী। তিনি বলেন, “জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি নিয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশগুলি দিয়েছিল, সেই অনুসারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্থায়ী ভবনের শিলান্যাসও হয়ে যাবে। কিন্তু হাইকোর্টের বেঞ্চ চালু করতে গেলে আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারকে রাষ্ট্রপতির একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। যেটা এখনও হয়নি। আমি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে পর পর দুটো চিঠি দিয়ে দ্রুত এই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে অনুরোধ করেছি।”
পাশাপাশি, আইনমন্ত্রীর অভিযোগ, বামেদের আমলে হাইকোর্টের স্থায়ী ভবন তৈরির জন্য এক টাকাও বরাদ্দ হয়নি। তাঁর দাবি, “তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেই স্থায়ী ভবন সহ অন্য পরিকাঠামোর কাজে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। কৃষ্ণবাবুর বক্তব্য, “বাম আমলেই জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের প্রস্তুতির সূচনা হয়। হাইকোর্টের যাবতীয় নির্দেশ সে সময় সরকার মেনে নেয়. এখন যে কেউ সত্যের অপলাপ করতেই পারেন। রাজ্যবাসী সবই জানেন।”
পাশাপাশি, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, স্থায়ী পরিকাঠামোর জমি বাম আমলেই চিহ্নিত করা হয়। অশোকবাবুর দাবি, “আমরা সার্কিট বেঞ্চ চালুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা যে অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। স্থায়ী পরিকাঠামোর জায়গা রেখেছি, সেখানেই তো সব হচ্ছে। মানুষ তো সবই বুঝতে পারছেন।”
ছবি: সন্দীপ পাল।
এদিন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে দুই মন্ত্রীর তরফেই সার্কিট বেঞ্চ পরিকাঠামোর কাজে টাকা কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আগামী ১৪ অগস্টের মধ্যে যাবতীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন দফতর এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। যত টাকা লাগে দেওয়া হবে। টাকা কোনও সমস্যা হবে না।” পাশাপাশি, আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্থায়ী ভবনের শিলান্যাসের আগেই হাইকোর্টের তরফে অস্থায়ী পরিকাঠামো পরিদর্শন হবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এদিন সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে নিয়ে আইনমন্ত্রী শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের জন্য চিফ মেট্রোপলিটন আদালত চালুর জন্য জায়গা দেখতে যান। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) হিমাঞ্চল বিহারের ‘মার্কেট কমপ্লেক্স’ ভবনটি প্রাথমিক ভাবে তাঁর পছন্দ হয়। ওই তিন তলা ভবনের নিচতলায় মূলত হিমাঞ্চল বিহারের বাসিন্দাদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ছোট একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। উপরের দুটি তলায় মোট পাঁচটি বড় মাপের হল ঘর রয়েছে। সেখানেই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের দুটি আদালত তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। শিলিগুড়ির আদালতের দুটি সিভিল কোর্টও সরিয়ে আনা হবে। এদিনই আইনমন্ত্রী এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই ভবনের নকশা এবং ছবি নিয়ে নেন। আজ, বুধবার সেগুলি হাইকোর্টে পেশ করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, “শিলিগুড়িতে কমিশনারেট চালু করে কমিশনারকে কিছু বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা দেওয়া হলেও আদালত চালু করা দরকার। সে জন্যই তড়িঘড়ি শিলিগুড়িতে ভবন বাছাই করতে আসা। এসজেডিএর ভবনটি পছন্দ হয়েছে। হাইকোর্টেও আপত্তি করবে বলে মনে হয় না। হাইকোর্টের অনুমতি পেলে মাসখানেকের মধ্যে এখানে আদালত চালু করা হবে।”
রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, ওই বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরি করা হয় হিমাঞ্চল বিহারের বাসিন্দাদের বাজার, ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের প্রয়োজন মেটাতে। তিনি বলেন, “আদালত হলে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর কিংবা অন্যান্য প্রয়োজন কীভাবে মিটবে? আমরা আবাসিকদের সুবিধার কথা ভেবে ওই মার্কেট তৈরি করেছিলাম। আমাদের হিমাঞ্চল বিহারের বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখেই তা করেছিলাম।”
৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া মাল্লাগুড়িতে হিমূলের গোখাদ্য তৈরির কারখানার খালি জমিও দেখেন তিনি। সেখানে শিলিগুড়ি আদালতের স্থায়ী ভবন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন বিচার বিভাগ। আইনমন্ত্রী জানান, প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি তৈরি করা হবে। স্থানীয় ভবন তৈরি হলে সিবিআই ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও সরিয়ে আনা হবে এখানে।
পাশাপাশি, আইনমন্ত্রী এদিন বলেছেন, “চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত চালু হলে কমিশনারেটের পাঁচটি থানা এলাকার ১০৭, ১০৯ ও ১১০ ধারায় অভিযুক্তদের বিচার সেখানেই হবে। কমিশনারকে এখনও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারির ক্ষমতা, অস্ত্র আইন, লাইসেন্স ও নবিকরণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আবার জমি সংক্রান্ত বিবাদের ক্ষেত্রে ১৪৪ ধারা জারির ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকের হাতেই থাকবে।”
এদিন শিলিগুড়ি মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে কিন্তু দেখা গিয়েছে, বিভ্রান্তি পুরোপুরি মেটেনি। কেননা, সরকারি বিজ্ঞপ্তিই মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছয়নি। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা নতুন করে কোনও অস্ত্রের নবিকরণের অনুমতি দেওয়া কিংবা আবেদনপত্র জমা নিচ্ছেন না। আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কারণে কোথাও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.