গরু পাচারে বাধা দিতে গিয়ে ফের পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হলেন এক গ্রামবাসী। ঘটনাস্থলও সেই বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর সীমান্তের গ্রাম কৈজুড়ি। সোমবার রাতে গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ গাইনের মাথায় দায়ের কোপ মারে পাচারকারীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গরু পাচারে দুষ্কৃতীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ গত শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত তাদের হাতে তিনজন গ্রামবাসী আক্রান্ত হলেন। এঁদের মধ্যে এক বৃদ্ধা মারাও গিয়েছেন।
|
পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এলাকার বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন, গরু পাচার যখন কোনওভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না, তখন প্রশাসন হয় তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক, নয়তো দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা এ বার নিজেরাই হাতে অস্ত্র তুলে নেবেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত ১১টা নাগাদ ফসলের খেত মাড়িয়ে বাড়ির উঠোন দিয়ে পাচারকারীরা কয়েকশো গরু নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা তার প্রতিবাদ করেন। এর পরেই দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে তাঁদের আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। অন্যরা পালাতে সক্ষম বলেও মুদির দোকানের মালিক রবীন্দ্রনাথবাবু দুষ্কৃতীদের সামনে পড়ে যান। দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় দা দিয়ে কোপ মারে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে উত্তেজনা ছড়ালে এসডিপিও আনন্দ সরকার এবং স্বরূপনগরের আইসি সেখানে যান। |
পৌঁছে যান বিএসএফের ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের আধিকারিক মনোজকুমার। তাঁদের দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। তাঁরা পাচারকারীদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে নিরাপত্তার দাবি তোলেন।
এ দিকে পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জ এলাকা থেকে দুই গরু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করায় ওই এলাকা দিয়ে গরু পাচার আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিবর্তে বসিরহাট, বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগর সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার বেড়ে গিয়েছে। কৈজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান রূপসী মণ্ডল বলেন, “বিএসএফের কাছে গুলি না চালানোর নির্দেশ আসার পর থেকেই সীমান্তে গরু পাচারকারী-সহ দুষ্কৃতীদের দাপট অনেক বেড়ে গিয়েছে। পাচারকারী, দুষ্কৃতীতের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ। এ সব বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।”
অন্যদিকে প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, গরু পাচার যে ভাবে বেড়ে গিয়েছে তাতে অন্য রাজ্য থেকে এ রাজ্যে গরু আসা বন্ধ না করলে এ সব রোখা যাবে না। পাচার হওয়া গরুর বেশিরভাগ আসে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে। ওই সব গরু গঙ্গার উপরে বিভিন্ন জায়গায় সেতু পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢোকে। ওই সব সেতুতে পাহার বসালে গরু পাচার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
|