|
|
|
|
কর্মী-সঙ্কট, বলছেন কর্তৃপক্ষ |
ফলপ্রকাশে দেরিই যেন নিয়ম বিদ্যাসাগরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফলপ্রকাশে দেরি যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফল বেরিয়ে গেলেও এই বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে থাকে। ৯০ দিনের আগে ফলপ্রকাশ হয় না। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। হয়েছে ছাত্র আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীও ঘোষণা করেছেন যে ৭০ দিনে ফলপ্রকাশ করা হবে। তবু হয়নি। এ জন্য কর্মী-সঙ্কটকেই দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার সুভাষ মাইতির কথায়, “কর্মী সঙ্কট এতটাই যে, সপ্তাহে সাতদিন কাজ করেও সময়ে ফলপ্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।” একই কথা উপাচার্যেরও। তিনি বলেন, “পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরে কর্মী সঙ্কট এতটাই প্রকট যে চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। এই সমস্যা দূর করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
সমস্যা বেশি প্রকট স্নাতক স্তরে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৪২টি কলেজে স্নাতক স্তরে পঠনপাঠন হয়। এ ছাড়াও আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্যারামেডিক্যাল ধরলে রয়েছে ৭২টি কলেজ। সেখানে বিএসসি-তে ১৫ বিষয়ে অনার্স, ১২টি বিষয়ে পাস পড়ানো হয়। বিএ তে ১২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৩টি বিভাগে পাস পড়ানো হয়। আর বিকমে পাসের পাশাপাশি ২টি বিষয়ে অনার্সও পড়ানো হয়। এর বাইরে বিভিন্ন কলেজে এগ্রো সার্ভিস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস অ্যান্ড ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি, অটোমোবাইল প্রভৃতি বিষয়ও পড়ানো হয়। আর রয়েছে বিএড। ১৭টি কলেজে বিএড পড়ানো হয়। বিপিএড চারটি কলেজে। ৩টি কলেজে তিন বছরের আইন পাঠক্রম ও ২টি কলেজে ৫ বছরের আইন পাঠক্রম, ৭টি কলেজে বিসিএ, তিনটি কলেজে প্যারামেডিক্যালও পড়ানো হয়। সব মিলিয়ে গড়ে প্রায় ১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসেন। পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরের পরিসংখ্যান ২০০৪ সালে সাধারণ বিভাগে ৩২ হাজার ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিতেন। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ। আর ওই সময়ে বিএডে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫০০ জন। তা বেড়ে হয়েছে ১৮০০। কিন্তু ডেপুটি কন্ট্রোলার বিভাগে কর্মী সংখ্যা থেকে গিয়েছে সেই ১১ জন! কন্ট্রোলার বিভাগেও কর্মী সংখ্যা একই। তবে সেখানে ততটা সমস্যা হয় না। কারণ, ওই বিভাগ থেকে কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ক’টি বিভাগ রয়েছে, তার পরীক্ষার দায়িত্ব সামলানো হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলারের পদও শূন্য ২ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই বিভাগকে সচল করতে হলে অন্তত ৩৫ জন কর্মী প্রয়োজন। প্রয়োজন অন্তত ৩ জন ডেপুটি কন্ট্রোলার ও ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার। এই দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু সুফল মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, কোন কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র হবে কোন কলেজে তা নির্দিষ্ট করা, সময়ে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া, পরীক্ষা শেষে খাতা নিয়ে আসা, খাতা দেখানোর ব্যবস্থা করা, মার্কশিট তৈরি থেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ হয় কন্ট্রোলারের দফতরে। এর বাইরে রয়েছে রিভিউ। বছরে গড়ে প্রায় ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী রিভিউয়ের আবেদন জানান। বর্তমানে তথ্য জানার অধিকার আইনেও পরীক্ষার্থীকে খাতা দেখাতে হয়! এই সংখ্যক কর্মী দিয়ে তা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কলেজের সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়ছে আসন সংখ্যা। ছাত্রছাত্রীর চাপ বাড়ায় কাজ আরও জটিল হয়ে পড়ছে। তাই সময়ে ফলপ্রকাশ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী ও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে না তুললে সময়ে ফলপ্রকাশ তো দূর, পরীক্ষা পদ্ধতিও ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। |
|
|
|
|
|