দু’টো শিং-চারটে পা, ‘বর্ণনা’ হাতড়ে গরু খুঁজছে পুলিশ
বাকিরা কোথায়?
কাঁচুমাচু মুখে থানার ওসি বলার চেষ্টা করছিলেন, “না...মানে, যে ক’টাকে পেয়েছি স্যার..!”
স্পষ্টই বিরক্ত বিচারক নির্দেশ জারি করেন, “উঁহু, ধরেছেন ১২০টা, অথচ গুনতিতে সতেরোটা কম, বাকিরা কোথায়? ওদের খুঁজে আনুন।”
অগত্যা ভরা শ্রাবণে আক্ষরিকই ‘গরু খোঁজা’ শুরু রামপুরহাট থানার পুলিশের। ঘন ঘন টুপি খুলে মাথার ঘাম মুছছেন থানার ওসি। বলছেন, “একটা-দুটো নয়, সতেরোখানা গরু খোঁজা কি চাট্টিখানি কথা! তবে বিচারক যখন বলছেন...খুঁজে তো দেখতেই হবে।” সতেরোটা গো-ধন বলে কথা! গেল কোথায় তারা?
দিন কয়েক আগে, মুর্শিদাবাদমুখী দু’টি ছুটন্ত ট্রাক থামাতেই খোল থেকে বেরিয়ে এসেছিল, এ-ওর ঘাড়ে কোনও রকমে মুখ গুঁজে থাকা, শতাধিক গরু। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রামপুরহাট ছুঁয়ে তাদের ঠিকানা বদলে যাচ্ছিল বাংলাদেশে।
কাগজপত্র দেখি?
পুলিশের ধমক খেয়ে ট্রাকচালকেরা কাঁদোকাঁদো গলায় জানিয়েছিল, “সে সব কিছু নেই স্যার।” ব্যাস! ট্রাকচালকদের থানার ফাটকে দিয়ে পুলিশ গরুগুলিকে চালান করে দেয় দখলবাটির গ্যাস-গুদামের পাঁচিল ঘেরা চত্বরে।
ওসি জয়ন্ত ঘোষ বলছেন, “আমি দাঁড়িয়ে থেকে টর্চ জ্বেলে গুনেছি, দুই গাড়ি মিলিয়ে ১০৩টে গরু ছিল। তাদের দেখাশোনার জন্য এক জন জিম্মাদার ঠিক করে ঘাস-বিচুলিরও ব্যবস্থা করেছিলাম। হিসেবে তো ভুল হওয়ার কথা নয়...!” ফের ঘাম মোছেন ওসি।
সোমবার, দুই ট্রাকচালকই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। আর বিপত্তির শুরু তার পরেই। মঙ্গলবার, গরু ব্যবসায়ীদের আইনজীবী রামপুরহাট আদালতে চালান দাখিল করে দাবি করেন, ইলামবাজারের হাট থেকে গোনাগুনতি ১২০টি গরু কিনে দু’টি ট্রাকে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে পাঠানো হচ্ছিল। অথচ পুলিশের ‘সিজার লিস্ট’-এ সেই সংখ্যাটাই হয়ে গিয়েছে ১০৩। পাক্কা সতেরোটা কম।
বাকিগুলো গেল কোথায়?
সরকারি আইনজীবী চন্দ্রনাথ গোস্বামী বলেন, “এসিজেএম আনন্দকুমার তিওয়ারি রামপুরহাট থানায় বড়বাবুকে ১৭টা গরু খুঁজে দিতে বলেছেন।” গরু ব্যবসায়ীদের আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাফ বলছেন, “ইলামবাজারের গরু ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া চালানে ১২০টি গরুর উল্লেখ রয়েছে। পুলিশ এখন ১৭টা গরু কম দেখালে তো চলবে না!”
এখন উপায়? রামপুরহাটের মহকুমা পুলিশ অফিসার দেবাশিস নন্দীর ভ্রূতেও ভাঁজ পড়েছে। তিনি যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেন, “১২০টি গরুকেই যে ওই দু’টি ট্রাকে তোলা হয়েছিল, তার প্রমাণ কী? ওই ১৭টি গরুকে তো অন্য ট্রাকেও তোলা হতে পারে!
তবে বিচারক যখন বলছেন, তখন খোঁজ তো করা হবেই।”
কিন্তু খুঁজবে কে? থানার পুলিশকর্মীদের মাথায় বাজ পড়েছে। তাঁরা বলছেন, “একে লোক কম, অপরাধী ধরতেই ঘাম ছুটে যায়, কিন্তু দু’টি শিং, চারটি পা, একটি লেজসাকুল্যে এই বর্ণনায় ১৭টা গরুর খোঁজ করা যায়!”
তাঁদের আক্ষেপ শুনছে কে?
গ্যাস-গুদামের ঘেরাটোপে একশো তিনটি প্রাণী নিশ্চিন্তে জাবর কেটে চলে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.