সম্পাদকীয় ২...
কাশ্মীরের শিশুযোদ্ধারা
ম্মু-কাশ্মীরের সোপোর জেলায় জঙ্গিরা শিশুদের জেহাদি যোদ্ধা রূপে প্রশিক্ষিত করিতেছে, এমন সংবাদ আগেই মিলিয়াছিল। সম্প্রতি তাহাদের দিয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীকে লক্ষ করিয়া গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণের দৃশ্যও বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে প্রচারিত হইয়াছে। দৃশ্যটি মর্মান্তিক। যাহাদের স্কুলে পড়াশোনা করার কথা কিংবা খেলার মাঠে আনন্দে খেলিয়া বেড়ানোর, তাহারা চোয়াল শক্ত করিয়া রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ লইতেছে, ইহার চেয়ে করুণ দৃশ্য আর কী? শিশুদের কাছ হইতে শৈশব কাড়িয়া লওয়া তাহাদের হত্যা করারই শামিল। জঙ্গিরা কতখানি মরিয়া হইলে এত নিষ্ঠুর অবিবেচনার পরিচয় দিতে পারে!
জঙ্গিদের যাহারা মুজাহিদ কিংবা ‘স্বাধীনতা-সংগ্রামী’ মনে করেন, তাঁহারা বলিতে পারেন, এই পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রই দায়ী, কেননা কাশ্মীরের তরুণ সম্প্রদায়ের কাছে মুজাহিদ হওয়া ব্যতীত উপায়ান্তর নাই। কথাটি যে সত্য নয়, শ্রীনগর উপত্যকায় উত্তরোত্তর স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়া আসাই তাহার প্রমাণ। শুধু তাহাই নহে, সেখানে সরকারি চাকুরি করিতে, বিশেষত পুলিশের শূন্য পদ ভরাট করিতে যে লক্ষ-লক্ষ আবেদন জমা পড়ে, হাজারে-হাজারে কাশ্মীরি যুবক যে ভাবে ইন্টারভিউ দিতে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করেন, তাহাতে বুঝা যায়, জঙ্গিদের যুক্তির কোনও সারবত্তা নাই, কাশ্মীরি আম জনতা তাঁহাদের নির্বাচিত সরকারকে ‘বিদেশি শাসন’ বলিয়া গণ্য করেন না (বড় জোর কর্মসংস্থানের একটু অতিরিক্ত সুযোগ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের একটু বাড়তি আশ্বাস চাহেন)। মুক্তিযুদ্ধের বিভ্রমটি জঙ্গিদের স্বকপোলকল্পিত গল্পকথা। আসলে তাঁহারা ক্রমাগত উপত্যকার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারাইতেছেন এবং জনসমর্থনও আর তাঁহাদের সঙ্গে নাই বলিয়াই মরিয়া হইয়া তাঁহারা শিশু-যোদ্ধা তৈয়ারে মনোনিবেশ করিয়াছেন। মজার ব্যাপার হইল, জঙ্গিদের হইয়া সর্ব ক্ষণ যাঁহারা শ্রীনগর ও দিল্লির সরকারকে গাল পাড়েন, তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করেন, কাশ্মীরের সেই হুরিয়ত নেতারা কিন্তু এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মৌনীবাবা। তাঁহাদের কাহারও মনে হয় নাই যে, শিশুদের মনে রাষ্ট্রদ্রোহ, সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা, বিধর্মীর প্রতি বিদ্বেষ জাগাইয়া তোলা এবং সেই ঘৃণা ও বিদ্বেষ চরিতার্থ করিতে আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড ও বিস্ফোরক ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যে কোনও অনৈতিকতা আছে!
অথচ শিশুদের রণাঙ্গনে প্রেরণ করা মানবতার বিরুদ্ধে ঘোর অপরাধ বলিয়া গণ্য। ১৫ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া বা যুদ্ধে লিপ্ত করা আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ীও ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলিয়াই গণ্য হইয়া থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই অপরাধ ব্যাপক ভাবে সংঘটিত হইয়া থাকে, যে কারণে সম্প্রতি গৃহযুদ্ধ-দীর্ণ ওই সব দেশের যুদ্ধসর্দার ও গোষ্ঠীপতিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার ও শাস্তিও হইতেছে। একই ধরনের কাপুরুষতা শ্রীলঙ্কার তামিল গেরিলা সংগঠন এলটিটিই-র নেতৃত্বও দেখাইয়াছিলেন, যখন তাঁহারা ১২-১৪ বছরের কিশোরদের গলায় সায়ানাইড ক্যাপসুল ঝুলাইয়া, হাতে মেশিনগান ধরাইয়া দিয়া আগুয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলায় প্ররোচিত করিতেন। হুরিয়ত নেতারা তো কথায়-কথায় কাশ্মীরে গণভোট লওয়ার প্রসঙ্গে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টানেন। ২০০৪ সালে নিরাপত্তা পরিষদে শিশুদের অস্ত্রসজ্জিত করার বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত যে প্রস্তাব, সেটি কার্যকর করার সাহস ও কল্পনাশক্তি কি তাঁহাদের আছে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.