ভোটের মুখে দলে বিদ্রোহ সামাল দিয়ে সমর্থনকে সংহত করতে নেমেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। আর সে জন্যই রাষ্ট্রপতি ভোটে পূর্ণ সাংমাকে সমর্থনের প্রশ্নে অতি-সক্রিয়তা দেখালেও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী যশোবন্ত সিংহকে ভোট দেওয়ার ঝুঁকি নিলেন না তিনি।
কেন এই সিদ্ধান্ত? আড়াই মাস আগে বিদেশ সফরে থাকার সময় একদা তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ প্যারীমোহন মহাপাত্র নবীন সরকারকে উৎখাতের ‘ষড়যন্ত্র’ করেছিলেন। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে সেই সঙ্কট কোনও রকমে মিটিয়েছেন। চার দিন আগে পাঁচ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে নতুন ন’জন মন্ত্রীকে এনে মন্ত্রিসভায় আনুগত্য বাড়িয়েছেন। দু’বছরের মাথায় লোকসভা ভোট। তার আগে পুরসভার ভোট। ঘরের সঙ্কট মেটানোই এখন সব থেকে বড় মাথাব্যথা নবীনের।
কিন্তু তার সঙ্গে বিজেপির উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার সম্পর্ক কী? রাষ্ট্রপতি ভোটে সাংমাকে সমর্থনের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছিলেন নবীন। জয়ললিতার সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপির সমর্থনও হাসিল করেছিলেন। কিন্তু এমন কী ঘটল, যশোবন্তকে সমর্থন থেকে নবীন পিছিয়ে এলেন? বিজেডি সূত্রের কথায়, রাষ্ট্রপতি ভোটে সাংমাকে সমর্থন করার অন্যতম বড় কারণ, তিনি উপজাতি নেতা। ভোটের আগে ওড়িশায় আদিবাসী ভোটকে সংগঠিত করতে সাংমাকে সব থেকে আগে সমর্থন করে দেওয়াটা নবীনের কৌশলই ছিল। সাংমা কখনই বিজেপির প্রথম পছন্দ ছিলেন না। বিজেপি নেতৃত্ব প্রথম থেকেই এপিজে আব্দুল কালামকে প্রার্থী করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কালাম বেঁকে বসায় তাঁরা সাংমাকে সমর্থন করতে বাধ্য হন। কিন্তু বিজেপি সাংমাকে সমর্থনের পর এই বার্তা যায়, নবীন বিজেপি তথা এনডিএ-র প্রতি আবার ‘ঘনিষ্ঠ’ হচ্ছেন। কিন্তু এই বার্তা ওড়িশায় বিজেডিকে বিপাকেই ফেলে। কারণ, রাজ্যে একই ধারার কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতি করে বিজেডি ও বিজেপি। ফলে ভোটের আগে বিজেপি-বিজেডি হাত ধরাধরি করলে একই ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়বে। এমনিতেই দলে সঙ্কটের অভাব নেই, তার উপর রাষ্ট্রপতি ভোটে এনডিএ-ঘনিষ্ঠতার বার্তায় নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে।
উপরাষ্ট্রপতি ভোটে দলের কৌশল কী হবে, তা নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন নবীন। তাতে এক পক্ষের মত ছিল, ইউপিএ-র সংখ্যালঘু প্রার্থী হামিদ আনসারিকে ভোট দেওয়াটাই ঠিক হবে। অন্য পক্ষের মত, রাষ্ট্রপতি ভোটে এক বার বিজেপি-র সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থনের পর তাদের চটানো ঠিক নয়। পরের ভোটে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গড়ার অবস্থায় থাকলে বিজেডির এনডিএতে যোগ দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সে তো ভোটের পরের অবস্থা। তার আগে রাজ্যে বিজেপিকে মাটি ছেড়ে না দেওয়ার পক্ষেই মতামত জানান অধিকাংশ নেতা।
বিজেডির এক শীর্ষ নেতার কথায়, দলের মধ্যে দুটি মত থাকলেও সিংহ ভাগের বক্তব্য ছিল, বিজেডি ভোট দিলেও যশোবন্ত হারবেন। তাই রাজ্যে ভোটের আগে বিজেপিকে জায়গা ছেড়ে না দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও বিজেপি থেকে সমদূরত্ব রাখার যে অবস্থান বিজেডি নিয়েছে,তাই মেনে চলা উচিত। যশোবন্তকে ভোট না দিয়ে সেই পথেই হাঁটলেন নবীন। |