কার্যকরী সভাপতি করার ভাবনা
মন্ত্রিত্বে নয়, আপাতত সংগঠনের কাজেই রাহুল
নমোহন সিংহের মন্ত্রিসভায় তাঁর যোগদান নিয়ে এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে যতই আলোচনা চলুক, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সে পথে হাঁটবেন না রাহুল গাঁধী। মা সনিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন রাহুল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যোগ না দিয়ে সাংগঠনিক কাজে অনেক বেশি মনোনিবেশ করবেন সনিয়া-পুত্র।
রাহুলের মনোভাব স্পষ্ট হওয়ার পরে কংগ্রেসের অন্দরে একটি প্রস্তাব উঠতে শুরু করেছে। তা হল, রাহুলকে দলের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট বা কার্যকরী সভাপতি করে দেওয়া হোক। তার পরে আগামী দু’বছর ধরে তিনি রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর কাজে হাত দিন। সনিয়া দলের সভানেত্রী হলেও তিনি এখন চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার কারণে তাঁর বিদেশযাত্রাও আসন্ন। তার আগেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।
সংগঠনে না মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই গত কাল সনিয়া গাঁধীর ভোজসভায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দলে রাহুলের গুরুত্ব কতটা বেড়েছে। সাধারণত এই ধরনের ভোজসভায় রাহুল এত দিন সনিয়া বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের টেবিলে বসতেন। গত কালের ভোজসভায় তাঁর জন্য পৃথক টেবিল রাখা হয়েছিল। এবং সেখানে এ কে অ্যান্টনি, সুশীল শিন্দে, অজিত সিংহের মতো মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে বসেছিলেন রাহুল।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার পিটিআইয়ের ছবি।
ইউপিএ সরকারে এবং কংগ্রেস সংগঠনে রাহুলের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজধানীতে নানা জল্পনা চলছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছিলেন, রাহুল যাতে অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। অনেকে তাঁকে প্রতিরক্ষা, বিদেশ, তথ্য প্রভৃতি মন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করার কথাও বলেছিলেন। আবার অনেকের মত ছিল, রাহুল যদি দফতরহীন মন্ত্রীও হন, তাতেও সমস্যা নেই। এই অংশের যুক্তি ছিল, রাহুল যদি প্রশাসনের অন্দরে কাজ করার সুযোগ পান, তা হলে আগামী দু’বছরে প্রশাসক হিসেবে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করবেন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে সুবিধা হবে। ইন্দিরা গাঁধীও নেহরু জমানায় প্রথমে তথ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু রাহুলের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের নেতারা দিগ্বিজয় সিংহ থেকে জয়রাম রমেশ, কেউই সনিয়া-পুত্রকে এখনই মন্ত্রী করার পক্ষপাতী নন। জয়রাম রমেশের মতে, মন্ত্রিত্ব এবং সংগঠনের মধ্যে রাহুল আপাতত সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনেই বেশি সক্রিয়। আর দিগ্বিজয় সিংহের বক্তব্য, মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি রাহুল নিজেই ঠিক করবেন।
গত কয়েক বছর ধরে পঞ্জাবের মতো বহু রাজ্যে ভুয়ো সদস্যপদ বাতিল করে সুষ্ঠু সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সদস্যদের গুণগত মান বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু দল মনে করছে, এই কৌশলের পাশাপাশি রাহুলকে আগামী দু’বছরের জন্য এমন কর্মসূচি নিতে হবে, যা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নির্ভর।
রাজ্যে রাজ্যে সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর কাজে পুরোদস্তুর হাত দেওয়ার আগে রাজ্যগুলিকে মোটামুটি তিনটি ভাবে ভাগ করে নিয়েছেন রাহুল। এ গুলি হল, কংগ্রেস-শাসিত, বিজেপি-শাসিত ও অকংগ্রেসি-অবিজেপি দল শাসিত রাজ্য। এই তৃতীয় অংশের মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলি। প্রাথমিক ভাবে রাহুলের কৌশল হল, গুজরাতের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্য দিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করা। এ বছর ডিসেম্বরে গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই, পুজো-মরসুম শেষ হলে গুজরাতে যাবেন রাহুল। সেখান থেকেই শুরু করবেন তাঁর কাজ।
রাহুল এখনই মন্ত্রিসভায় যোগ না দিলেও শচিন পায়লট, মিলিন্দ দেওরা, সন্দীপ দীক্ষিত, জ্যোতি মির্ধার মতো ‘টিম-রাহুলে’র কয়েক জন সদস্যকে এখনই প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অন্দরে। এই অংশের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে এঁরাই রাহুলের হাতকে আগামী দিনে শক্তিশালী করতে পারবেন।
রাহুলের দায়িত্ব নিয়ে গবেষণা চললেও গাঁধী পরিবারের এখনও সিদ্ধান্ত, প্রিয়ঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন না। তিনি রায়বরেলী, অমেঠিতে অর্থাৎ মা ও ভাইয়ের কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখবেন। কিন্তু গোটা দেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না। প্রিয়ঙ্কা এখন ব্যস্ত আছেন রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের নানা সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে। রণথম্ভৌরে বেড়াতে গিয়ে রাজীব গাঁধী সেখানকার জঙ্গল ও প্রাণীদের যে সব ছবি তুলেছিলেন, সে সব নিয়ে প্রবন্ধও লিখেছেন। নিজেও অনেক ছবি তুলেছেন। শেখ হাসিনার কন্যা এই মুহূর্তে দিল্লিতে। তিনি প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে যৌথ ভাবে কিছু সমাজকল্যাণমূলক কাজও করছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.