এক বৃদ্ধ ও দু’টি শিশু।
প্রথম জন অনেকের প্রাণ বাঁচিয়ে গিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে। তিনি ওক ক্রিক গুরুদ্বারের প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রন্থিক সদবন্ত সিংহ কালেকা। এরই পাশাপাশি রবিবার অনেকের জীবন বাঁচাতে অসম্ভব সাহায্য করেছে দু’টি শিশুর বুদ্ধি ও তৎপরতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন হামলার দিন সদবন্তের অসীম সাহসের কারণেই গুরুদ্বারে আসা ভক্তদের সিংহভাগই আজ বেঁচে রয়েছেন। রবিবার বন্দুক নিয়ে ওয়েড মাইকেল পেজকে গুরুদ্বারে ঢুকতে দেখে ৬৫ বছরের এই বৃদ্ধ তেড়ে গিয়েছিলেন কৃপাণ হাতে। তাতেই কিছুটা হলেও হতচকিত হয়ে যায় বন্দুকবাজ ওই নয়া-নাৎসি। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। সেই অসম যুদ্ধে অবশ্য হারতেই হয়েছে সদবন্তকে। কয়েক মুহূর্ত পরেই পেজের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এই সামান্য সময়টুকুই অসামান্য হয়ে ওঠে উপস্থিত প্রার্থনাকারীদের কাছে। ওই সময়টুকুর ফাঁকেই নিরাপদ জায়গা খুঁজে লুকিয়ে পড়েন অনেকেই। ১৯৮২ সালে এ দেশে এসে ব্যবসা শুরু করেছিলেন সদবন্ত। পরে প্রতিষ্ঠা করেন ওই গুরুদ্বার। বাবাকে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই গর্বিত অমরদীপ সিংহ কালেকা। বললেন, ‘তিনি সত্যিই বীর নায়ক।’ |
অভিনন্দন প্রাপ্য আরও দু’টি শিশুর। বলছেন অমরদীপরা। বয়স দশও পেরোয়নি। গুরুদ্বারের বাইরে খেলছিল তারা। তাদের মায়েরা তখন ভিতরে রান্নার কাজে ব্যস্ত। বন্দুক হাতে একটা লোককে গুরুদ্বারে ঢুকতে দেখে শিশু দু’টিই প্রথম বিপদ আঁচ করে চিৎকার করে ওঠে। মায়েদের হুঁশিয়ার করে দেয়, “হেঁসেল থেকে কেউ বেরিও না।” সেই চিৎকারই সতর্ক করেছিল অনেককে।
ওক ক্রিকের সেই গুরুদ্বারের ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি গুরুদ্বারে আজ শোকসভার আয়োজন করা হয়। সহমর্মী স্থানীয় অনেক বাসিন্দাই এসেছিলেন সেখানে। হোপ বেইলি তাঁদেরই এক জন। জানালেন, সাধারণত গুরুদ্বারে আসেন না। আজ সপরিবারে সেখানে ঢোকার সময় কিছুটা অস্বস্তিই কাজ করছিল মনে। এসেছিলেন উইসকনসিনের গভর্নর স্কট ওয়াকার এবং তাঁর স্ত্রী টনেট। গুরুদ্বারের বাইরে জুতো খুলে ভিতরে ঢোকার পরে তাঁদের প্রত্যেককেই হাত জোড় করে অভ্যর্থনা জানানো হল। দেওয়া হল মাথা ঢাকার রুমাল। যখন বেরিয়ে এলেন তখন তাঁদের চোখেও জল।
আজ নিহতদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ঘাতক পেজের মা লরা লিন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলের এই নৃশংসতায় তিনি মর্মাহত। কয়েকটি সংগঠনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পেজ ছিল হতাশাগ্রস্ত এক নয়া-নাৎসি। সে বিশ্বাস করত, ‘শ্বেতাঙ্গরাই সর্বশ্রেষ্ঠ’। তাই কট্টর নয়া-নাৎসিদের মতোই মাথা কামিয়ে রাখত সে। জানা গিয়েছে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময়ে সে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ মন্তব্য করত। গান গাইত ‘এন্ড অ্যাপাথি’ নামের একটি রক ব্যান্ডে। তাদের গানগুলি মূলত বিদ্বেষ ও হিংসা ছড়াতেই। পেজদের গান সরাসরি কৃষ্ণাঙ্গ, ইহুদি ও সমকামীদের হত্যা করার কথাও বলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১০ অগস্ট পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। তিনি এমনও বলেন, “এফবিআইয়ের তদন্তে যদি দেখা যায় রবিবারের এই ঘটনা সত্যিই বর্ণবিদ্বেষের ফল, তা হলে দেশবাসীর ‘আত্মসমীক্ষা’ প্রয়োজন। তা হলেই এই ধরনের হিংসা কমতে পারে।” |