সিউড়ি সদর হাসপাতালের ‘বিতর্কিত’ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ওই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির একাধিক অভিযোগ আছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাঠানো একটি মুখবন্ধ চিঠি সোমবার দেবাশিসবাবুর হাতে তুলে দেন সিউড়ি সদর হাসপাতালের সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ। ওই চিঠি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটির আবেদন করে হাসপাতাল ছাড়েন ওই চিকিৎসক। বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক এ দিন বলেন, “শুনেছি ওই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
তবে, এই মুহূর্তে আমি
ছুটিতে রয়েছি। বুধবার কাজে যোগ দেওয়ার পরেই এ ব্যাপারে বিশদে বলতে পারব।” যদিও দেবাশিসবাবুর দাবি, “সাসপেনশন সংক্রান্ত কোনও চিঠি পাইনি। তবে, স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার জন্য চিঠি এসেছে।”
গত ২ নভেম্বর সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার বাসিন্দা রেখা বাউরি নামে এক আসন্ন প্রসবা বধূকে দেবাশিসবাবু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। রোগিণীর পরিবার সিউড়ি হাসপাতালেই চিকিৎসা কবার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও দেবাশিসবাবু গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। বাড়ি ফেরার পথে দুবরাজপুর থানার কাছে প্রকাশ্যে শিশুপুত্রের জন্ম দেন ওই বধূ। দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই বধূর স্বামী। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা তখনই এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেবাশিসবাবুকে শো-কজ করার পাশাপাশি তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে একাধিকবার কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর আগে আর এক আসন্নপ্রসবাকে ওই চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে তিনিও সিউড়ির রাস্তায় সন্তানের জন্ম দেন। সেই সময় জেলাশাসকও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত-কমিটি গঠন করেছিলেন। দোষী প্রমাণিত হওয়ার তাঁকে বদলি করা হলেও আদালতে ওই চিকিৎসক নিজের প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দেখিয়ে সে যাত্রা বদলি আটকান।
এ দিন সিউড়িতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “হাসপাতালে নিয়মিত না আসা, রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ বারবার উঠেছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।” তাঁর আরও অভিযোগ, নিজেকে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের কর্তা দাবি করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতেন। ঘটনা হল, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে হাসপাতাল চত্বরে একাধিকবার বিক্ষোভও দেখিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। চলতি এপ্রিলে দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে আসেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রেরিত দুই সদস্য। সেই সময়ও ছুটি নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ওই চিকিৎসক। সাসপেনশনের শাস্তি ওই দুই সদস্যের দেওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বলেই মনে করা হচ্ছে। |