পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। তাই রাজ্যের ৫০ শতাংশ আমন ধানের জমি অগস্টের প্রথম সপ্তাহেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। চলতি মরসুমে ওই সব জমিতে আর ধান রোয়া যাবে কি না, সেই ব্যাপারে রাজ্যের কৃষি দফতর এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তাই ঘাটতি-বৃষ্টির জেলাগুলিতে বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছে তারা। রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য সোমবার বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমন চাষের বিকল্প হিসেবে কলাই, মসুর, ভুট্টা, সর্ষে চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
কৃষি দফতরের হিসেব, দক্ষিণবঙ্গে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্বাভাবিকের থেকে ২৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যে-সব জেলায় আমন চাষ বেশি হয়, সেখানে এ বার অনেক জমিতে বৃষ্টির অভাবে ধানই রোয়া যায়নি। জুলাইয়ের শেষ দিকে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে অবশ্য ভাল বৃষ্টি হয়েছে। ভাল বৃষ্টি পেয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান শিল্পাঞ্চল। কিন্তু বর্ধমানের যে-অঞ্চল কৃষিপ্রধান, সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে পর্যাপ্ত বর্ষণ সত্ত্বেও সামগ্রিক ভাবে ওই জেলায় ২৫ শতাংশ বৃষ্টি-ঘাটতি থেকে গিয়েছে। বৃষ্টির ঘাটতি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে।
রাজ্যের খরিফ চাষের হাল নিয়ে কৃষি দফতর এ দিন মহাকরণে বৈঠকে বসেছিল। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “খরিফ চাষের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, তা এখনই ঠিকঠাক বলা সম্ভব নয়। কারণ, অগস্টের তিন সপ্তাহ হাতে রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ভাল বৃষ্টি হলে অনেক জমিতেই ধান রোয়া যেতে পারে।” কিন্তু দিল্লির মৌসম ভবন অগস্টে বৃষ্টির যে-পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে কৃষি দফতরের সেই আশায় ছাই পড়তে পারে। জুলাইয়ের তুলনায় অগস্টে বৃষ্টি কমবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। এই পরিস্থিতিতে এখনই ঘাটতি-বৃষ্টির জেলাগুলিতে বিকল্প চাষ শুরু করার পক্ষপাতী কৃষি দফতরের অনেকেই।
কৃষি দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, অগস্টের বাকি তিন সপ্তাহে কিছু না কিছু বৃষ্টি হবে বলেই তাদের ধারণা। সেটা যদি হয়, চাষিরা আরও কিছু জমিতে আমন ধান চাষ করতে পারবেন। তবে অনেক জায়গাতেই কৃষকেরা আর বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নন। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমানে ইতিমধ্যেই পাম্প চালিয়ে ভূগর্ভের জল তুলে নিতে শুরু করেছেন অনেকে। তাতে আবার অন্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন জল-বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা চান, রাজ্য সরকার বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করুক। নইলে বোরো মরসুমে পাম্প চালিয়েও ভূগর্ভের জল পাওয়া যাবে না। বৃষ্টি কম হওয়ায় ইতিমধ্যেই ভূগর্ভের জলের গভীরতা কমতে শুরু করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এই অবস্থায় পাম্পের লাগামছাড়া ব্যবহার অন্য বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা ভূবিজ্ঞানীদের।
|