পঞ্চায়েতে আরও ‘মমতা’ তৈরি করতে চান চন্দ্রিমা
র ‘পরিবারতন্ত্র’ নয়, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে মূলত ‘রাজনীতি-সচেতন’ মহিলা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে চান মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
চন্দ্রিমাদেবীর উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট কোনও আসন মহিলা সংরক্ষিত হয়ে গেলে সাধারণত সেখানে পুরুষ প্রার্থীর (বা নেতার) পরিবারের কোনও মহিলাকে এগিয়ে দেওয়া হয়। সে উদাহরণ খাস কলকাতা পুরসভাতেও রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রিমাদেবী সেই ‘ঐতিহ্যে’র পরিবর্তন করতে চান।
এই ‘পরিবর্তনে’র পথে উদাহরণও তাঁর হাতের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর কোনও পারিবারিক রাজনৈতিক পটভূমি ছিল না। বা কারও ‘ছেড়ে-যাওয়া’ সংরক্ষিত আসনে যাঁর ভোটের লড়াই শুরু হয়নি। নিজস্ব রাজনীতি-সচেতনতার জোরে তিনি এখন রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক। বলা বাহুল্য, চন্দ্রিমাদেবীর এই ‘পদক্ষেপ’ তাঁর দলনেত্রীর ‘অনুমোদন’ সাপেক্ষেই।
অতএব, মহিলাদের জন্য পঞ্চায়েতের ৫০% সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী খুঁজতে দলের যাঁরা নামবেন, তাঁদের চন্দ্রিমাদেবীর নির্দেশ, বাবা-দাদা-স্বামী রাজনীতিক এমন মহিলার চেয়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘ওয়াকিবহাল’ ও পঞ্চায়েত প্রশাসন সামলানোর ‘দক্ষতা’ রয়েছে, এমন মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তৃণমূলের বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে রবিবার এক বৈঠকে তিনি ওই নির্দেশ দিয়ে বলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে বুথভিত্তিক এমন রাজনীতি-সচেতন মহিলা প্রার্থীর নামের তালিকা তাঁকে জমা দিতে হবে।
এ বার থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ৫০% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে রাজ্যে। যেখানে অতীত ঐতিহ্য বলছে, মহিলা-সংরক্ষিত আসনে পুরুষ রাজনৈতিক কর্মীর বদলে তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের কোনও মহিলা সদস্যকে দাঁড় করিয়ে তাঁদের মামুলি ‘তল্পিবাহক’ করে দেওয়া হয় (এ ব্যাপারে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ সর্বোচ্চ নিদর্শন স্থাপন করে গিয়েছেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর যিনি দ্রুত নিজের পদে তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে বসিয়ে দিয়েছিলেন)। চন্দ্রিমাদেবী সেই ‘রেওয়াজ’ ভাঙতে সচেষ্ট।
পঞ্চায়েতে এ বার একলা চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। তাই ভোট-ময়দানে নামার আগে মহিলা প্রার্থীদের রাজনীতির পাঠ ও কৌশল শিখিয়ে-পড়িয়ে নেওয়ার প্রতিও গুরুত্ব দিতে চাইছে প্রধান শাসকদল। সোমবার চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “রাজনীতি-করা মহিলারা পরিবারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকবেন, সে সময় এখন নেই। মমতাদি চাইছেন মহিলারা স্ব-শক্তিতে স্বনির্ভর হোন। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মহিলার আগ্রহ, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণাকে। পারিবারিক পরিচয়ের বাইরে সক্রিয় রাজনীতি করা মহিলারাই পঞ্চায়েতে আসুন, সেটাই চাই।” তবে রাজনৈতিক পরিবারের মহিলা যদি স্বাধীন ভাবে প্রশাসন পরিচালনায় দড় হন, তাঁকেও প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে চন্দ্রিমাদেবী জানান।
প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি চন্দ্রিমাদেবী দুই সহযোগী বিধায়ক স্মিতা বক্সি এবং মালা সাহাকে নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে মহিলাদের বোঝাবেন, কী ভাবে মমতা-সরকারের কাজ নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করতে হবে। চন্দ্রিমার কথায়, “মহিলাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করা হচ্ছে সব মহকুমায়। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, পঞ্চায়েত পরিচালনার খুঁটিনাটি, পঞ্চায়েত আইন সরল ভাবে বোঝানো হচ্ছে মহিলা প্রার্থীদের। ব্লকে ব্লকে মানুষের বাড়িতে পৌঁছে মহিলাদের নয়া সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে বলা হচ্ছে।” স্বনির্ভর প্রকল্প ও মহিলাদের জন্য রাজ্যের প্রকল্পগুলি নিয়েও প্রচারের পরামর্শ দিয়েছেন চন্দ্রিমাদেবী।
জোট শরিকের সঙ্গে টক্কর দিতে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় শিবির করে মহিলা প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে শরিক কংগ্রেসও। তারাও চায় ‘রাজনীতি-সচেতন’ মহিলা প্রার্থী। তরুণ প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সঙ্গেই পঞ্চায়েত প্রস্তুতি ও প্রচারের দিশা ঠিক করতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর নজরুল মঞ্চে পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুব কংগ্রেস। গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রের প্রকল্প এবং এ রাজ্যে সেগুলির বাস্তবায়নের খতিয়ান তুলে ধরে পাল্টা প্রচারের অভিমুখ নিতে চাইছে তারা। তবে রাজ্যবাসী তাকিয়ে থাকবেন পঞ্চায়েতে দুই জোট শরিকের মহিলা-মহিলা টক্করের দিকেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.