কোথাও দেওয়ালে ফাটল, কোথাও আবার ছাদ থেকে খসে পড়ছে চাঙড়।
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের দেবনগর মোক্ষদাদিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি। যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রাবাসটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের নানা মহলে আবেদন করা হলেও এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আবাসিক ছাত্রেরাও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামী স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম নামখানার ওই স্কুলটি। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি সংলগ্ন উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়া-হুগলিরও বহু ছাত্র ওই স্কুলে পড়ে। তারা ছাত্রাবাসেই থাকে। স্কুলটি তৈরি হয়েছিল ৬০ বছর আগে। একই ভবনে ছিল ছাত্রবাস। বছর পনেরো আগে স্কুলের জন্য পাশেই আলাদা ভাবে তিনতলা দু’টি ভবন তৈরি হয়। তখন থেকে পুরনো স্কুলভবনটি পুরোটাই ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাত্রাবাসটিতে রয়েছে ৩৯টি ঘর। অন্তত এক হাজার ছাত্র সেখানে থেকে পড়াশোনা করে বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। |
পুরনো ভবনটি ছাত্রবাস হয়ে যাওয়ার পর কখনও মেরামত করা হয়নি বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে ছাত্রাবাসের ঘরে বসে পড়ার সময়ে ছাদ থেকে একটি বড় চাঙড় খসে পড়ে আহত হয় পাঁচ ছাত্র। তার পরেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগে রয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে প্রধান শিক্ষক উৎপল দাস বলেন, “সরকারি সাহায্যে স্কুলের নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুরনো ভবন সংস্কারের জন্য টাকা মিলছে না। স্কুল তহবিলের টাকায় ছাদের ভেঙে পড়া কিছু অংশের সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পুরো ছাত্রাবাসটির যা অবস্থা, তাতে সংস্কার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা আমাদের নেই। ফলে, সরকারি সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারব না। সমস্যার কথা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা প্রশাসনে বহুবার জানানো হয়েছে।”
বর্ষাকালে ছাত্রাবাসটির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় হয় বলে জানিয়েছে আবাসিক ছাত্রেরা। তাদের মধ্যে ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র, হুগলির অনুপ শর্মা বলে, “বৃষ্টিতে ঘরে জল পড়ে। বিছানা ভিজে যায়। কখন চাঙড় ভেঙে পড়বে, আমরা সব সময়েই সেই আতঙ্কে থাকি।” গোসাবার বাসিন্দা, নবম শ্রেণির ছাত্র সমর মণ্ডল বলে, “টানা ক’দিন বৃষ্টি হলেই ছাদের চাঙড় খসে পড়তে থাকে। পড়াশোনার জন্য এই অবস্থাতেও থাকতে হচ্ছে।”
কেন মেরামত করা হচ্ছে না ছাত্রবাসটি?
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুমারেশ পণ্ডা বলেন, “এই ছাত্রাবাসটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু সংস্কারের প্রয়োজনীয় টাকা আমাদের তহবিলে নেই। বিষয়টি মহকুমাশাসক এবং জেলা প্রশাসনে জানানো হয়েছে।” কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, “ওই ছাত্রাবাসের সমস্যার কথা শুনেছি। সংস্কারের জন্য যাতে সরকারি অনুদান মেলে, সে জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।” জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, জেলার অনেক ছাত্রাবাসেরই সংস্কার প্রয়োজন। সে কথা রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ছাত্রাবাসই সংস্কার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। |