বাড়ি শুধু বাড়ি নয়। তা স্মৃতিও। কখনও কখনও তা শহরের স্মৃতি। কখনও দেশের ইতিহাসের অঙ্গ।
যেমন কুমার হস্টেল। ইতিহাস গবেষক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় তিনশো বছরের পুরনো ওই ছাত্রাবাসটি কোনও ইংরেজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল বলে অনুমান। ১৭৫৭ সালে পলাশি যুদ্ধের পরে বর্তমান সার্কিট হাউস তৈরির আগে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এসে থাকতে পারেন। কিন্তু কোনও প্রামাণ্য তথ্য পাইনি। তবে ওই ছাত্রাবাসে সূর্য সেন থাকতেন।”
১৯১৫-১৯১৮ সাল পর্যন্ত মাস্টারদা সূর্য সেন কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। বহরমপুরের দক্ষিণ প্রান্তে ভাগীরথীর পূর্বপাড় লাগোয়া এই হস্টেলে থাকতেন তখন তিনি। কলেজ অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “১৯৯৭ সালের পর থেকে বাস করার অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে ওই ছাত্রাবাস। আর্থিক অভাবে তা সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।”
গোরাবাজার, খাগড়া, দৈহাট্টা এবং মণীন্দ্রনগর এলাকার বেশ কয়েকটি জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে পুরসভায়। তার মধ্যে জনবহুল খাগড়ার ওষুধ বাজার লাগোয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারের যাতায়াত করতে হয়। বাড়ির বর্তমান মালিক রূপকুমার জৈন বলেন, “আমিও চাই বাড়ি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণ করতে। কিন্তু বাড়ির একটি অংশ জবরদখল করে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ির ভগ্নদশা দেখে আদালতও বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুরসভা-প্রশাসনের কোনও সহায়তা পাইনি।” |
বৃহস্পতিবার এমনই একটি তিন তলা বাড়ির ছাদের চাঙড় খসে মারা যান এক মহিলা। আহত হন আরও এক মহিলা। পুরনো ধ্বংসপ্রায় বাড়ি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে পুরসভাও উদ্যোগী হয়েছে। সোমবারই গোরাবাজার ১৮ নম্বর রুটি মহলের দোতলা বাড়ির মালিক সুনন্দাচন্দ্র (পাল)-কে পুরসভা কার্যালয়ে শুনানির জন্য ডেকে পাঠান হয়। সুনন্দাদেবী বলেন, “আমাদের বাড়িটি একশো বছরেরও পুরনো। কেউ বাস করে না। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু বাড়ির নিচের একটি অংশে এক জন ভাড়াটিয়া থাকায় বাড়ি সংস্কারও করতে পারছি না। তাই বাড়ি ভেঙে দেওয়ার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করি।” পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “বাড়ির মালিককে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সমাধান না করতে পারলে পুরসভা ওই বাড়ি ভেঙে দেবে।” এর আগে অবশ্য পাড়া-প্রতিবেশীদের আবেদনের ভিত্তিতে পুর-কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে খাগড়া উমা বেওয়া লেনের একটি দোতলা বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী জিতেন দে বলেন, “খাগড়ার ওই দোতলা বাড়িটি শরিকি বিবাদের কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিছু দিন আগে ছাদের চাঙড় খসে পড়ে প্রতিবেশী এক জনের মোটরবাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পরেই পাড়ার লোকজন সকলে মিলে ওই বাড়ি ভেঙে দেওয়ার জন্য পুরসভার কাছে আর্জি জানান। পুর-কর্তৃপক্ষ ওই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।” |