লালকৃষ্ণ আডবাণীর ব্লগ পড়ে হাড়ে হাড়ে চটেছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ঘরোয়া আলোচনায় তাঁদের প্রশ্ন, এক জন নেতা বা তাঁর ব্লগই যদি সব ঠিক করে দেয়, তা হলে কি বুঝতে হবে বিজেপির কোর গ্রুপ বা সংসদীয় বোর্ড অকেজো হয়ে গিয়েছে? আডবাণীর লেখার ব্যাখ্যা দিতে দিতে হিমশিম বিজেপি নেতৃত্বও আজ অসন্তোষ চেপে রাখেনি। এমনকী, শরিকদেরও একাংশ বুঝিয়ে দিয়েছে, বিজেপির বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে তাঁরা একমত নন।
গত কাল নিজের ব্লগে আডবাণী এমন এক সম্ভাবনার উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর তাঁকে সমর্থন জানাবে এই দুই প্রধান দলের কোনও একটি। এর পরেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি ভোটের আগেই দলের পরাজয় স্বীকার করে নিচ্ছেন আডবাণী? যিনি এখনও দলের সংসদীয় বোর্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তিনি এমন কথা বললে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এই পরিস্থিতিতে আরএসএস তাদের ক্ষোভ চেপে রাখেনি। তাদের বক্তব্য, আডবাণী তো বিশ্লেষক-সাংবাদিক নন। তিনি বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। সেটা ভুলে গেলেন কী ভাবে?
আবার এই ব্লগের জেরে চটেছেন নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহরাও। বস্তুত, বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে
করছেন, দলের মধ্যে যে নেতৃত্ব নিয়ে
কোন্দল রয়েছে, তাকে উস্কে দিতেই আডবাণী নিজের ব্লগকে ব্যবহার করেছেন। তিনি হয়তো দেখাতে চেয়েছেন, নীতীশ কুমারের
মতো আঞ্চলিক নেতাকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাতে এনডিএ-কে আরও সঙ্ঘবদ্ধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবটা কি তাই? তিনি কি এ ভাবে নিজের দলের দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতাদের, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি?
আডবাণীর এই ব্লগে মোদীও যথেষ্ট চটেছেন।
প্রকাশ্যে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। তবে নীতীশের
সঙ্গে তাঁর ঠান্ডা লড়াইয়ে যে ভাবে আডবাণী বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ নিলেন, তাতে মোদীর ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই মতের পক্ষে আডবাণী এনডিএ-র শরিকদেরও পাননি।
নীতীশের দলেরই নেতা শরদ যাদব স্পষ্ট বলেছেন, “আমি আডবাণীর এই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে একমত নই।” অকালি নেতা সুখবীর সিংহ বাদলও বুঝিয়েছেন, তিনি আডবাণীর কথা মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “আমরা এনডিএ-র সঙ্গে যুক্ত। তাই জোটে যে সিদ্ধান্ত হবে, তা-ই মেনে চলব।”
বিজেপির একটি বড় অংশ বলছে, এ ভাবে এক দিকে মোদীকে যেমন প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন আডবাণী, অন্য দিকে দলকে সংগঠিত করে আগামী লোকসভা ভোটে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে চেষ্টা নিতিন গডকড়ী করছেন, তাকেও ধাক্কা দিতে চেয়েছেন। এই অংশের বক্তব্য, সঙ্ঘ চায়, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো আডবাণীও রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে দলের মেন্টর হিসেবে থাকুন। মোহন ভাগবত এ কথা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতার কাছে। তবু এ ভাবে তিনি দলের ভিতরকার ক্ষমতার লড়াইয়ে ঘি ঢালার কাজ করেছেন। এতে দলের কোনও লাভ হবে না। কর্মীদের মনোবলে তো আঘাত লাগবেই, গডকড়ীর কাজও কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্য একটি অংশ কিন্তু এখনও আডবাণীর সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, আগামী লোকসভায় কে নেতা হবেন, সে ব্যাপারে এই ভাবেই চাপ তৈরি করলেন তিনি। আডবাণীর শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, ব্লগে যা বলা হয়েছে, তা অপ্রিয় হলেও সত্যি তো বটে। দলে যে সর্বসম্মত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো লোকের অভাব, সেটা তো বাস্তব। তা হলে?
গডকড়ী-জেটলি ঘনিষ্ঠরা আবার বলছেন, সব সময় অপ্রিয় সত্যি যে বলতে নেই, সেটা কি এই ৮৪ বছর বয়সে এসে আডবাণীকে নতুন করে বোঝাতে হবে? |