দুষ্কৃতীদের জুলুমের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ বছরই দোলের দিন উত্তর ২৪ পরগনার বিশরপাড়ায় খুন হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল অসীম দাম। সম্প্রতি গাইঘাটার সুটিয়া-গণধর্ষণ কাণ্ডে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে খুন হন স্কুলশিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। দুষ্কৃতীদের জুলুমের প্রতিবাদ করে খুন হওয়ার তালিকায় এ বার যুক্ত হল ১৫ বছরের শেখ সুলতানের নামও।
মহেশতলার রবীন্দ্রনগরের নয়াবস্তিতে পথচলতি মানুষদের কাছ থেকে টাকা কেড়ে জুয়া খেলত দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, তাদের বাধা দিতে গিয়ে রবিবার রাতে খুন হয় শেখ সুলতান। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সোমবার দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম শেখ জালাল ও শেখ রাজেশ। বাকিদের ধরার দাবিতে সোমবার রবীন্দ্রনগর থানায় বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার বিকেলে ইফতারের জন্য ফল কিনতে বেরিয়েছিল সুলতান। এলাকার এক ইটভাটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সে দেখে, তার বন্ধু জিয়ারুল ঘরামিকে মারধর করছে কিছু যুবক। জিয়ারুল তাকে জানায়, ওই যুবকেরা জুয়া খেলার জন্য তার থেকে টাকা কেড়ে নিয়েছে। বাধা দেওয়ায় তাকে মারধরও করছে। |
প্রত্যক্ষদর্শী মেহমুদ আনসারি জানান, ঘটনাটি শুনে ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সুলতান। তখনই জিয়ারুলকে ছেড়ে সুলতানকে বেধড়ক মেরে ইটভাটায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা। পুলিশ জানায়, মেহমুদই পাড়ার লোকজনকে ডেকে আনেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুলতানকে গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অপুষ্টিতে ভুগছিল ওই কিশোর। রোজা রাখায় সারা দিন কিছু খায়নি। মাথায় ও বুকে চোট পাওয়ায় তার হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে যায়।
সোমবার সকালে এ খবর পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকাবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা কয়েক বছর ধরেই এলাকায় নানা দুষ্কর্ম চালাচ্ছে। জুয়ার টাকা কম পড়লেই তারা পথচলতি মানুষদের কাছ থেকে ছিনতাই চালায়। বাধা দিতে গেলে মারধর করে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেও কাজ হয়নি। সুলতানের মৃত্যুর পরে তাই এলাকাবাসীর যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে থানায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
মহেশতলা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকাটিতে মূলত নিম্নবিত্ত মানুষদের বসবাস। সুলতানের বাবা দিনমজুর। তাঁদের অভিযোগ, বাইরে থেকে আসা ওই যুবকেরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে। পুলিশের সঙ্গেও তাদের ওঠাবসা রয়েছে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “যারা সুলতানকে পিটিয়ে মেরেছে, তাদের কয়েক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এলাকায় জুয়া খেলা হয় বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কে।” |