লক্ষ্য লগ্নিকারীদের আস্থা জয়
অর্থনীতির হাল ফেরাতে মাঠে নামলেন চিদম্বরম
পুরনো মন্ত্রকে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরানোকেই পাখির চোখ করছেন পি চিদম্বরম।
এই নিয়ে তৃতীয় বার অর্থ মন্ত্রকের হাল ধরলেন এই দক্ষিণী নেতা। তার পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আজই প্রথম মুখ খুললেন তিনি। তাঁর ঘোষণা, ঘরে-বাইরের এক গুচ্ছ সমস্যায় হাঁসফাঁস দেশের অর্থনীতি ছন্দে ফেরাতে প্রথমেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা জয়ে জোর দেবে অর্থ মন্ত্রক। তার জন্য কর-আইন সরল ও স্পষ্ট করা যেমন অগ্রাধিকার পাবে, তেমনই গুরুত্ব পাবে অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টেনে রাজকোষ ঘাটতি কমানো। খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে কেন্দ্র যেমন তার জোগান বাড়াবে, তেমনই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েও জোরালো সওয়াল করবে সুদ কমানোর।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। তবে তাঁকে বিপাকে ফেলতে আসন্ন বাদল অধিবেশনে অর্থনীতির ধুঁকতে থাকা ছবিই তুলে ধরতে চাইছেন যশবন্ত সিন্হা, গুরুদাস দাশগুপ্তের মতো বিরোধী দলের নেতারা।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থার বয়ান হোক বা শিল্প-প্রতিনিধিদের অভিযোগ। সম্প্রতি ভারতের অর্থনীতি নিয়ে যে বিষয়টি প্রায় সব জায়গায় সবার আগে ফুটে উঠেছে, তা হল এ দেশের মাটিতে লগ্নি করার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা। অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশও বার বার বলেছেন, তলানিতে ঠেকা বৃদ্ধি, বিপুল রাজকোষ ঘাটতি কিংবা চড়া মূল্যবৃদ্ধি সমস্যা নিশ্চয়ই। কিন্তু ভারতের সামনে এই মুহূর্তে সব থেকে বড় সমস্যা সম্ভবত দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীদের কাছে তার টোল খাওয়া ভাবমূর্তি। এ দিন শিল্পমহলের ঠিক সেই ক্ষোভের জায়গাতেই সব থেকে আগে ভরসার হাত রাখার চেষ্টা করেছেন চিদম্বরম।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, সরকারের ভাঁড়ারে ঘাটতি কমাতে শুধু
মেরি কম-কে নিন। ঘাটতিকে নক-আউট করতে উনিই সেরা বাজি।

আনন্দ মহীন্দ্রা
(মহীন্দ্রা ও মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর কর্তা)
অর্থমন্ত্রীর কথায়, আর্থিক বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লগ্নি। আর লগ্নি আসার প্রাথমিক শর্ত আস্থা। বিনিয়োগকারীরা চান, যাতে তাঁদের লগ্নি সুরক্ষিত থাকে। তার জন্য জরুরি কর-আইনে স্বচ্ছতা, প্রশাসনে গতি এবং অবশ্যই অর্থনীতির ভিত পোক্ত থাকা। গত ১ অগস্ট অর্থ মন্ত্রকে ফিরে ঠিক এই বিষয়গুলির উপরই জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
গত বাজেটে কর ফাঁকি রোধ আইন (জিএএআর) নিয়ে প্রস্তাব এবং তার জেরে ভোডাফোনের সঙ্গে তিক্ততা যে সামগ্রিক ভাবে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি খারাপ করেছে, তা বিলক্ষণ জানে কেন্দ্র। সেই কারণেই সম্প্রতি সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই ভাবে, কমিটি গড়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি এবং গবেষণা কেন্দ্রে কর-ছাড়ের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেও। আগামী দিনে যে ওই বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন চিদম্বরম। জানিয়েছেন, লগ্নির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সব কর-প্রস্তাবই পুনর্বিবেচনা করবেন তাঁরা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিদম্বরম মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজস্ব সচিবের পদ থেকে সরেছেন আর এস গুজরাল। প্রণববাবুর জমানায় কর ফাঁকি রোধ আইন নিয়ে যথেষ্ট কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন যিনি। তাঁর জায়গায় এসেছেন সুমিত বসু। স্বাভাবিক ভাবেই এই ‘রুটিন’ অদল-বদলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নর্থ ব্লক।
মূল্যবৃদ্ধির নাছোড় সমস্যা যুঝতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চড়া সুদের নীতির আঁকড়ে থাকার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনই সরব শিল্প মহল। তাঁদের মতে, এতে এক দিকে শিল্পের জন্য মূলধন জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, চাহিদা কমছে বাড়ি-গাড়ির মতো নানা জিনিসের। এ দিন অর্থমন্ত্রী জানান, খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজন জোগান বৃদ্ধি। এর জন্য প্রয়োজনে মজুত ভাণ্ডার থেকে খাদ্যদ্রব্য বার করে আনতেও পিছপা হবে না কেন্দ্র। সেই সঙ্গে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, “তবে বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে কখনও কখনও হিসাব কষে ঝুঁকি নেওয়া জরুরি।” ইঙ্গিত স্পষ্ট, শুধু মূল্যবৃদ্ধি কমার আশায় বসে না-থেকে এখনই সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত করুক কেন্দ্র। এ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
প্রণববাবুর জমানার সমালোচনা না-করলেও, এ দিন বার বারই তার সঙ্গে নিজের অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ের তুলনা টানেন চিদম্বরম। স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন যে, দেশের অর্থনীতিকে ফের সেই ‘সোনার সময়ে’ই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। যে জন্য বার বার তাঁর বক্তব্যে ঘুরে-ফিরে এসেছে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির গতি ত্বরান্বিত করার কথা। জোর দিয়েছেন উৎপাদন শিল্পের হাল ফেরানোর উপর। জানিয়েছেন, রাজকোষ ঘাটতি কমাতে প্রয়োজনে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে তাঁকে। এ ছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করা, মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমায় সাধারণ মানুষের লগ্নি বাড়ানো-সহ আরও বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তিনি। যার অনেকগুলির কথা সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের ভার নিজের হাতে রাখার সময় বার বার বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও।
এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে সংসদের ভিতরে-বাইরে শরিক ও বিরোধী দলগুলির সহযোগিতা যে প্রতি পায়ে প্রয়োজন হবে, তা এই পোড় খাওয়া কংগ্রেসি নেতার অজানা নয়। তাই অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে সকলকে পাশে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি কিংবা বাম দলগুলি যে ভাবে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি নিয়ে সংসদে সরব হতে তৈরি হচ্ছে, তাতে সেই ঐকমত্য কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহের কারণ থাকছে যথেষ্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.