কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের কোর্সে ভর্তি হতে এসেছিল বছর বারোর ছেলেটি। চটপট উত্তর দিয়ে উতরেও গিয়েছিল। কিন্তু বাধা হয় বয়স। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন ডিরেক্টরের সাহায্যে বিশেষ ক্লাসের সুযোগ পেয়েছিল ওই কিশোর।
বহু বছর বাদে একটি সেমিনারে কলকাতা বিড়লা তারামণ্ডলের প্রাক্তন অধিকর্তা বি জি সিদ্ধার্থকে সেই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন নাসার এক বিজ্ঞানী। অধ্যাপক সিদ্ধার্থের কথায়, “উনি বললেন, আমি-ই সেই ছেলেটা। নিয়মকানুনের বেড়া সত্ত্বেও আমাকে আপনি তারামণ্ডলের কোর্সে সুযোগ দিয়েছিলেন।”
আর মঙ্গলপৃষ্ঠে কিউরিওসিটির পদার্পণের জায়গা যাঁরা বেছে দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাসার ওই বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ। ‘সেই ছেলেটা’।
|
অমিতাভ ঘোষ |
ডন বস্কো এবং আইআইটি (খড়্গপুর)-র এই প্রাক্তনী ১৫ বছর নাসায় রয়েছেন। কিউরিওসিটি যে প্রকল্পের অন্তর্গত, সেই মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভারস মিশন-এ গোড়া থেকেই যুক্ত তিনি।
মঙ্গলের জল-হাওয়া এবং ওই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, তা বুঝতেই কিউরিওসিটি নামে ওই চলমান গবেষণাগারটিকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোথায় সে তার সন্ধান খুঁজবে, তা নিয়েই ছিল প্রশ্ন। দীর্ঘ গবেষণার পর নাসা ঠিক করে, মঙ্গলের নিরক্ষরেখার কাছে ‘গেল’ নামে একটি গহ্বরের মধ্যে নামানো হবে এই অভিযাত্রী গাড়িটিকে (রোভার)। এর পর দু’বছর ধরে প্রায় ১৫৪ কিলোমিটার চওড়া ওই গহ্বরে সন্ধান চালাবে মাকড়সা সদৃশ যানটি। কেন এই গহ্বরকে বেছে নেওয়া হল?
সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে অমিতাভবাবু বললেন, “উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গিয়েছে, এই গহ্বরটিতে স্তরীভূত শিলা রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি স্তরেই আলাদা আলাদা ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং উপাদান মিলবে। ফলে মঙ্গলের আবহাওয়ায় কখন বদল এল সেটাও বোঝা যাবে।”
কী ভাবে? বাঙালি বিজ্ঞানী বলছেন, “স্তরীভূত শিলা তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে মাটিতে প্রচুর খনিজও আছে। দু’টোর সঙ্গেই জলের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, জল না থাকলে এ ধরনের ভূতাত্তিক গঠন সম্ভব নয়। তাই ওই গহ্বরে সন্ধান চালালে মঙ্গল থেকে ঠিক কোন সময়ে জল উবে গেল, সেটাও বোঝা যাবে।” তিনি মনে করছেন, মঙ্গলে জল ছিল। উপগ্রহ চিত্রে মঙ্গলপৃষ্ঠে তার দাগও মিলেছে। কিন্তু আবহাওয়া বা জলবায়ুগত পরিবর্তনে তা বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
সাত বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা এই গবেষণার পরিকল্পনা কিন্তু সাত মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারত। জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যেতে পারত কিউরিওসিটি॥
সেই আগ্রহ থেকেই আইআইটি-তে ফলিত ভূতত্ত্বের পাঠ শেষ করে গবেষণা করতে পাড়ি দেন আমেরিকার টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকেই নাসায় যোগদান। দীর্ঘ পনেরো বছর কাজের পরে এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত অমিতাভবাবু বলছিলেন, “বিংশ শতাব্দীতে মানুষ পাঠিয়ে চাঁদ থেকে পৃথিবীর গবেষণাগারে পাথর আনতে হয়েছিল। আর এই শতকে আমরা একটা গবেষণাগারকেই মঙ্গলে পাঠিয়ে দিলাম।” |