গরু পাচারকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিএসএফ জওয়ান বিজয় ভেঙ্কট আউটে। পাচারকারীরা ওই জওয়ানকেই আগ্নেয়াস্ত্র সমেত তুলে নিয়ে যায় বাংলাদেশে। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে মালদহের কালিয়াচক থানার চরি অনন্তপুর সীমান্তে। রবিবার বিএসএফ এবং বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের সঙ্গে (বিজিবি) দফায় দফায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পরে বিকালে জওয়ানকে মহদিপুর সীমান্তে ফেরত দেওয়া হয়। চোরাকারবারীদের মারধরের জেরে গুরুতর জখম হয়েছেন ওই জওয়ান। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়। ওই ঘটনার জেরে বিএসএফ জওয়ান মহলে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিজিবি’র প্রশ্রয়ে চোরাকারবারীরা এই এলাকায় এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন জওয়ানরা। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের বিএসএফের ডিআইজি শ্রী মধুকর। ডিআইজি বলেন, “চোরাকারবার রুখতে জওয়ানরা কাঁটাতারে বেড়ার দুপাশে ভারত ভূখন্ডে টহল দেন। শনিবার রাতে বাংলাদেশের ২৫-৩০ জন চোরাকারবারী কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু ও নানা সামগ্রী পাচারের চেষ্টা করলে ১২৫ ব্যাটেলিয়নের ওই জওয়ান বাধা দিয়েছিলেন। চোরাকারবারীরা তাঁকেই অপহরণ করে বাংলাদেশে নিয়ে যায়। তাঁর ইনসাস রাইফেল ও গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনও লুট করা হয়। পুরো ঘটনা দিল্লিকে জানানো হয়েছে। দিল্লি এ ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। যেভাবে আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে চোরাকারবারীরা কর্তব্যরত জওয়ানকে অপহরণ করে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
গোটা মালদহেই পাচারকারীদের রমরমা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ রয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বসে মালদহ সীমান্ত এলাকা দিয়েই দুষ্কৃতীরা দেশ জোড়া জাল নোটের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বিএসএফের তরফেও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের অনুমান, সেই কারণেই চোরাকারবারীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঘটনার দিন রাতে টহল দেওয়ার সময়ে ১১ নম্বর গেটের কাছে কাঁটাতারের বেড়া কাটতে দেখে ওই জওয়ান একাই এগিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা জওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। হাতের আগ্নেয়াস্ত্র বার করার আগেও ওই জওয়ান দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়ে যান। ওই জওয়ান চিৎকার করলে সঙ্গীরা ছুটে যান। তার আগেই দুষ্কৃতীরা ওই জওয়ানকে বেড়ার ওপারে নিয়ে যান বলে অভিযোগ।
অপহৃত জওয়ানকে উদ্ধার করার জন্য এ দিন সকাল থেকে তৎপর হন বিএসএফ আধিকারিকেরা। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে খবর দেওয়া হয়। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে ঢাকায় বিজিবি’র সদর দফতরে খবর দেওয়া হলে নড়েচড়ে বসেন দু’দেশের কর্তারা। তার পরেই এদিন চরি অনন্তপুরে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। বিএসএফের অভিযোগ, প্রথম দিকে বিএসএফ জওয়ান অপহরণের ঘটনা স্বীকার করতে চাননি বিজিবি কর্তারা। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় মহদীপুরে বিজিবি’র পক্ষ থেকে ওই জওয়ানকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “আমিও শুনেছি সীমান্ত থেকে এক বিএসএফ জওয়ানকে বাংলাদেশের চোরাকারবারীরা তুলে নিয়ে যায়। তবে সরকারি ভাবে এখনও বিএসএফের পক্ষ থেকে আমাদের জওয়ান অপহরণের ঘটনা জানানো হয়নি।”
চরিঅনন্তপুর ও আশেপাশের ক্যাম্পের জওয়ানরা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের চোরাকারবারীদের একার পক্ষে বিএসএফ জওয়ান অপহরণ করার সাহস নেই। বিজিবি জওয়ানদের সঙ্গে চোরাকারবারীদের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে। জওয়ান অপহরণ করতে বাংলাদেশের চোরাকারবারীদের সঙ্গে কয়েকজন বিজিবি জওয়ানও এসেছিল বলে দাবি করেছেন চরিঅনন্তপুর সীমান্ত চৌকির কয়েকজন জওয়ান। |