রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতি অভিযোগ তুলে হুমকি দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। ওই ঘটনার জেরে একযোগে ১৪ জন চিকিৎসক গরহাজির হওয়ায় মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার ওই ঘটনায় বিপাকে পড়েন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতাধিক রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। পরিস্থিতি সামলাতে আজ, সোমবার কোচবিহারের জেলাশাসকের নির্দেশে নিজের দফতরে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মাথাভাঙার মহকুমা শাসক। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে হাসপাতাল কর্তারা ছাড়াও পুলিশ, পুরসভার প্রতিনিধি, এলাকার বিধায়ক সহ বিভিন্ন মহলের কর্তাদের ডাকা হয়েছে। মাথাভাঙার বাসিন্দা তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনেরও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা। শুক্রবার মাথাভাঙা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল উত্তেজিত জনতা ভারপ্রাপ্ত সুপার-সহ কয়েকজন চিকিৎসককে নিগৃহীত করেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি ওই হাসপাতালেও ব্যাপক ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। ঘটনার পরেও একাধিক চিকিৎসককে বিক্ষিপ্তভাবে একদল উত্তেজিত যুবক হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। রবিবার সকালেও এমনই এক চিকিৎসককে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে এদিন হাসপাতালে উপস্থিত চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৪ জন। ফলে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। ভারপ্রাপ্ত সুপার-সহ চারজন চিকিৎসক দিনভর কাজ চালাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতাল খোলা রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ। রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা মাথাভাঙার বাসিন্দা হিতেন বর্মন অবশ্য বলেছেন, “বহিরাগত কিছু যুবক সমস্যা তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে চিকিৎসকদের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার ব্যাপার নেই। প্রয়োজনে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করছি।” জেলাশাসক মোহন গাঁধীও বলেন, “জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই বিষয়টি জানিয়েছেন। স্থানীয় মহকুমাশাসককে সোমবার সমস্যা মেটাতে সংশ্লিষ্ট সবমহলকে নিয়ে বৈঠক ডাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে মোট চিকিৎসক রয়েছেন ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন গোলমালের আগে থেকেই ছুটি নেন। শুক্রবার গোলমালের পর থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত আরও ৯ জন চিকিৎসক ছুটি নেন। একজন কোন কিছু না জানিয়ে গরহাজির রয়েছেন। একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার শংকরলাল ঘোষ বলেন, “১৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে গোলমালের পরেও ১১ জন কাজে যোগ দেন। শনিবার রাতে ওই সংখ্যা কমে ৭ জনে দাঁড়ায়। রবিবার সকালে আরও একজন চিকিসককে কিছু যুবক হুমকি দেওয়ায় তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ জনে। যা পরিস্থিতি তাতে এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতাল চালু রাখাই মুশকিল হয়ে পড়বে। সবকিছুই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানিকলাল দাস অবশ্য ওই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস রবিবার জানিয়েছেন, “ওই সমস্যা নিয়ে সিএমওএইচের রিপোর্ট এখনও পাইনি। সেটা পেলে বিষয়টি দেখা হবে।” সিংহভাগ চিকিসকদের ওই অনুপস্থিতির জেরে হাসপাতালের পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্ন রোগীর পরিজনেরাও। মাথাভাঙার বাসিন্দা শৈলেন মোদক বলেন, “শুক্রবার রাতে আমার এক আত্মীয়াকে পেটের যন্ত্রণার জন্য ভর্তি করানো হয়। সেভাবে দেখভাল হচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই ছুটি নিয়ে বাইরে দেখাতে হয়।” |