প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয়ের শিলান্যাস হয়েছিল ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে। স্কুলভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে একের পর এক বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট। স্কুলভবন তো তৈরিই হয়নি, উল্টে মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘদিন দিন ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের বালসি গ্রামের জুনিয়র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টি। বর্তমানে ওই অসম্পূর্ণ স্কুলভবন ঝোপে ঢেকে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।
বালসি এলাকায় একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের দাবি মেনে বালসি পশ্চিমপাড়া মৌজায় প্রস্তাবিত জুনিয়র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্কুলের জন্য বালসি হাইস্কুলের শিক্ষক গোপাল পাল, মধুসূদন ঘোষ, মোহন ঘোষ-সহ কয়েকজন গ্রামবাসী আড়াই বিঘে জমি দান করেন। পশ্চিমপাড়ায় তাঁদের দান করা সেই জমিতেই ২০০১ সালের ১২ মার্চ ওই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিকল্পনা কমিটির সদস্য তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সুস্মিতা বাউরি সাংসদ তহবিল ও ইন্দাসের বিধায়ক নন্দদুলাল মাঝি বিধায়ক তহবিল থেকে ৬ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই স্কুলভবন নির্মাণের জন্য। প্রশাসন সূত্রের খবর, সাংসদ তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থে স্কুলের ১২টি ক্লাসঘর তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে স্কুলভবন তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই বালিকা বিদ্যালয়। |
পাত্রসায়র ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম বালসি। অথচ এলাকায় কোনও বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নেই। ফলে চাপ বাড়ছে বালসি হাইস্কুলে। বর্তমানে বালসি হাইস্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৩০০। তার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। গ্রামবাসী কল্যাণ কোনার, বুদ্ধদেব পাল, মুক্ত ভুঁইরা বলেন, “বালিকা বিদ্যালয়টি হলে গ্রামের মেয়েদের পড়াশুনার সুবিধা হত। আমরা চাইছি অবিলম্বে এই বালিকা বিদ্যালয়টি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হোক।” গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, “দীর্ঘদিন ধরে অসম্পূর্ণ অবস্থায় স্কুলভবনটি পড়ে রয়েছে। সন্ধ্যার পরে সেখানে মদ-জুয়ার আসর বসছে। অসামাজিক কাজ হচ্ছে।” বালসি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ কোঙার বলেন, “এলাকার ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বালিকা বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে ওই বালিকা বিদ্যালয়টি তৈরি হলে ভাল হত।”
কিন্তু কেন নির্মাণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কোনও তরফ থেকে স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এ দিকে, এই বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ণ থাকা নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক কাজিয়া শুরু হয়েছে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে। তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রতিটি ভোটের আগে ওই বালিকা বিদ্যালয় তৈরির নামে এলাকার মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে ধাপ্পা দিয়েছে সিপিএম। এলাকার মানুষ এতদিনে তা বুঝতে পারছেন। ওই বালিকা বিদ্যালয় তৈরি না হওয়ার জন্য দায়ী সিপিএম নেতৃত্ব ও তদানীন্তন বামফ্রণ্ট সরকার।” তাঁর দাবি, ওই বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ নতুন করে শুরু করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী অবশ্য এই স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরকে দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, “আমরা ওই স্কুলটি তৈরির জন্য সবরকম চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে অনুমতি না মেলায় পরবর্তীতে সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল থেকে আর অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ফলে স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের বক্তব্য, “স্কুলটি চালু হতে ভাল হত। সরকারি কিছু জটিলতার জন্য স্কুলটি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমরাও চাই নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে স্কুলটি চালু হোক।” ১১ বছর পরেও এখনও দূর অস্ত। কবে হবে কেউ জানে না। |