এ-ও এক ফুটবলের বিশ্বকাপ। যার সঙ্গে সেতু গড়ল কলকাতা। ভারতীয় দলের হয়ে ফুটবলের এই বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে এই শহরেরই তিন বাঙালি! এক জনের বয়স পনেরো, এক জনের আঠেরো, এক জনের উনিশ। ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, নেদারল্যান্ডস্, পর্তুগাল, মেক্সিকোর মতো ফুটবলের তারকা-দেশের সঙ্গে লড়বে তারা। শুনে আপামর বাঙালির হৃদপিণ্ড চলকে উঠতে বাধ্য।
বিশ্বকাপই বটে! দশম ‘হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১২।’ মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে যা শুরু হচ্ছে। চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। ‘ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘উয়েফা’ এর অন্যতম সহযোগী। পৃথিবীর ৬৮টি দেশ থেকে আসছেন প্রতিযোগীরা। ছেলে ও মেয়েদের জন্য রয়েছে আলাদা টুর্নামেন্ট। তাঁরা কেউ গৃহহারা বস্তিবাসী, কেউ রাস্তায় কাগজ বিক্রি করে দিনযাপন করে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে কারও ঠিকানা উদ্বাস্তু শিবির, কেউ আবার ড্রাগ বা মদ ছাড়ার জন্য দু’বছর বা তার বেশি সময় ধরে ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ কেন্দ্রের বাসিন্দা। |
এ ভাবেই চলছে বিশ্বের দরবারে পা মেলানোর প্রস্ততি। ময়দানে
সালাউদ্দিন ও সুরজিতের সঙ্গে অনুশীলনে শিল্পা। ছবি: সুদীপ আচার্য |
২০০৩ থেকে এদের নিয়েই আয়োজিত হচ্ছে এই ‘অন্য রকম’ বিশ্বকাপ ফুটবল। ৭৩টি দেশ এই প্রচেষ্টায় শরিক। ২০০৭ থেকে ভারত এই বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। সেখানে ভারতের পারফরম্যান্স-র্যাঙ্কিংও চমকে দেওয়ার মতো, ৪৩! এই প্রথম এই বিশ্বকাপের ভারতীয় দলের জন্য বাছাই হয়েছে কলকাতার তিন বাঙালি কিশোর-কিশোরী।
তিন জনেই ‘ফ্লাইং সেক্স-ওয়ার্কার’ বা ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীর সন্তান। মায়েরা কাজ করেন কলকাতা ও তার আশপাশে। স্থায়ী ঠিকানা নেই। বস্তি আর পল্লি বদলাতে থাকে। দারিদ্র, অপমান, অনিশ্চয়তা নিত্য সঙ্গী। তার মধ্যেই ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছিল সুরজিৎ ভট্টাচার্য, মহম্মদ সালাউদ্দিন আর শিল্পা দে। প্রথম জন এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, দ্বিতীয় জন এখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র, আর এই দলের সব চেয়ে ছোট শিল্পা। সে নবম শ্রেণির ছাত্রী। ফুটবলই তিন জনের ধ্যানজ্ঞান।
বিভিন্ন পাড়া আর স্কুল ম্যাচ থেকে এই তিন খেলোয়াড়কে চিহ্নিত করেছিল ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’। তার পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল নাগপুরে হোমলেস ওয়ার্ল্ডকাপের সহযোগী ভারতীয় সংগঠন ‘ক্রীড়া বিকাশ সংস্থা’ আয়োজিত ফুটবল শিবিরে। সেখানেই বিশ্বকাপের পুরুষ টিমের জন্য সুরজিৎ ও সালাউদ্দিনকে এবং মহিলা টিমের জন্য শিল্পাকে বাছাই করা হয়।
গত শুক্রবার মহাকরণে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে দেখা করে তাঁর আশীর্বাদও নিয়ে এসেছে তিন জন। মন্ত্রী বলেছেন, “আসল বিশ্বকাপ ফুটবলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতামান ভারত কবে পাবে, তা ভবিষ্যতই বলতে পারে। কিন্তু এই অন্য রকম বিশ্বকাপের দৌলতে ভারতীয় তথা বাঙালির দুধের সাধ অন্তত ঘোলে মিটছে। শিল্পা, সুরজিৎ, সালাউদ্দিনের সাফল্য কামনা করছি।”
২০০৩ সালে প্রথম হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল হয় অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরে। বিষয়টি যাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁরা স্কটল্যান্ডের মেল ইয়াং এবং অস্ট্রিয়ার হ্যারল্ড স্কমাইড। তাঁদের দাবি, এই বিশ্বকাপ সেই সব মানুষের জীবন পাল্টে দিতে অনুঘটকের কাজ করে, যাঁরা এই সমাজে প্রান্তবাসী। ফুটবলের নিয়মানুবর্তিতা, সহ-খেলোয়াড়দের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করা, নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ফলে তৈরি হওয়া মর্যাদা ও দায়িত্ববোধ মানুষগুলির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বেশির ভাগ প্রতিযোগীই এই বিশ্বকাপের পরে জীবনটা অনেক গুছিয়ে নিতে পারেন। আপাতত বারুইপুরের হোমের মাঠে প্রতিদিন কোচ বিশ্বজিৎ মজুমদারের কাছে চলছে স্ট্রাইকার শিল্পা, সালাউদ্দিন আর মিডল-হাফ সুরজিতের দাঁতে দাঁত চাপা প্রশিক্ষণ। শিল্পা বলল, “মা-মাসিরা প্রথমে রাজি ছিলেন না। মেয়েরা ফুটবল খেলবে কী! তার পরে জোর করে স্কুলে ম্যাচ দেখাতে নিয়ে গেলাম। সাতটা গোল করেছিলাম। সবাই এত প্রশংসা করল যে, মা আনন্দে কেঁদে ফেললেন। এত ভাল কথা তো আমাদের কেউ বলে না।” শ্যামলা মেয়ের চোখ দু’টি কথা বলতে বলতে জ্বলে ওঠে, “আমি এই পরিবেশ থেকে বেরোব। বিদেশে যাব। খেলব। একটুও ভয় পাব না। আমার মনের জোর অনেক। মায়ের জন্য আর দেশের জন্য আমাদের জিততেই হবে।” সালাউদ্দিন আর সুরজিতের চোয়ালও কথা বলতে গিয়ে শক্ত হয়ে ওঠে, “ফুটপাথে-ফুটপাথে খেলে বড় হয়েছি। আমাদের পাড়াকে লোকে ঘেন্না করত। আমরা দেখাতে চাই, এই পাড়া থেকেও ছেলেরা অনেক দূর উঠতে পারে। ফুটবলটাই আমাদের শক্তি।” |
• শান্তিপুর ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল পিয়ারলেস। রবিবার ফাইনালে তারা রেলওয়ে এফ সি-কে ৩-০ গোলে হারাল। পিয়ারলেসের হয়ে জোড়া গোল করেন জ্যাকসন এবং একটি গোল ওয়াহিদের।
•
বিবেকানন্দ সাঁতার সংস্থা আয়োজিত ওয়াটারপোলো ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন বিবেকানন্দ সাঁতার সংস্থা, বউবাজারকে ৯-৩ হারিয়ে। সেরা খেলোয়াড় বিবেকানন্দের সন্ময় সাঁতরা।
•
প্যাটারসন মেমোরিয়াল আন্তঃ স্কুল টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ ২৫-২৮ অগস্ট, ভবানীপুর ব্যায়াম সঙ্ঘে। যোগদানের শেষ দিন ২০ অগস্ট। |