দমকলের ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে ডিজি-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন মানিকতলা দমকলকেন্দ্রের ওসি। ঘটনাচক্রে, সেই ওসি-কেই কলকাতা থেকে লিলুয়ায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এই বদলির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রশ্ন উঠেছে দমকলের অভ্যন্তরে। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, লিখিত অভিযোগ পেয়েও ঘটনার কোনও রকম তদন্ত করেননি ডিজি। বরং অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত দমকলের গাড়ির এক চালকের না জানিয়ে ছুটি নেওয়াকে কেন্দ্র করে। মানিকতলা দমকলকেন্দ্রের ওসি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়াকে লিখিত অভিযোগে সবিস্তার জানিয়েছিলেন, দমকলের এক চালক না জানিয়ে ছুটি নেওয়ায় তিনি তাঁকে ‘অ্যাবসেন্ট’ দেখিয়েছিলেন। তা নিয়ে ওই চালক অশোকবাবুর কাছে কৈফিয়ৎ চান। অশোকবাবু ওই চালকের দুর্ব্যবহার ও ঔদ্ধত্যের বিষয়ে ডিভিশনাল অফিসারকে রিপোর্ট দেন। কিন্তু অভিযোগ, ডিরেক্টর গোপাল ভট্টাচার্য অশোকবাবুকে ফোনে বলেন, ‘‘ওই চালক আমার শিষ্য। আপনি তাকে অ্যাবসেন্ট দেখিয়েছেন!’’ ওই চালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে ডিরেক্টর অশোকবাবুকে রিপোর্ট তুলে নিতে বলেন।
দমকল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ডিজি-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ফল উল্টো হয়েছে। ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত হয়নি। বরং অশোকবাবুকেই মানিকতলা থেকে লিলুয়ায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত’ বলে জানাচ্ছেন বাম-প্রভাবিত ফায়ার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা। তৃণমূল-প্রভাবিত জাতীয়তাবাদী দমকল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদেরও একই মত। ইউনিয়ন নেতারা ইতিমধ্যে এই বদলি রদ করার জন্য ডিজি-কে অনুরোধও করেছেন।
ডিজি-র বক্তব্য, “উর্ধ্বতন স্তরের নির্দেশেই এই বদলি কার্যকর করা হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে অশোকবাবু সজ্জন ও সৎ অফিসার বলেই পরিচিত। তবে ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে অশোকবাবুর অভিযোগের প্রসঙ্গটি কার্যত এড়িয়ে গিয়েই ডিজি বলেছেন, “আমার কাছে অজস্র অভিযোগ আসে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।”
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান এ ব্যাপারে বলেন, “বদলি তো কতই হয়। এই ঘটনাটি আমার জানা নেই।” গত ২৪ জুলাই অশোকবাবু ছাড়াও দমকলের লাইসেন্স বিভাগের তিন জন ফায়ার প্রোটেকশন অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। লাইসেন্স বিভাগে তিন বছরের বেশি কাউকে রাখার রেওয়াজ নেই। কিন্তু দমকলকেন্দ্রে অনেক ওসি ১০ বছরের বেশি সময় ধরেও থাকেন। মানিকতলা থেকে অশোকবাবুকে সাত বছর বাদে বদলি করা হল।
এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন অশোকবাবু। ডিরেক্টর গোপাল ভট্টাচার্য অবশ্য কোনও রকম গোলমালের কথা মানতে চাননি। এই বদলি নিয়ে জলঘোলা করতে কেউ কেউ অহেতুক মিথ্যা রটাচ্ছে বলে তিনি বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। |