ফলন-বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের দিয়েই পরীক্ষামূলক চাষ করানোয় উদ্যোগী হল কৃষি দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬৪টি জায়গায় ধান ও ৬৬টি জায়গায় ভুট্টার পরীক্ষামূলক চাষ হবে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, বেশিরভাগ চাষিই এখনও সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করেন। ফলে ততটা ফলন হয় না। অথচ, একটু নিয়ম মেনে চাষ করলেই ১০-১৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। সেই লক্ষ্যেই সরকারি খরচে চাষিদের দিয়ে চাষ করানোর উদ্যোগ। কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “জমি বাড়ছে না। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। তাই কম জমিতেই বেশি ফসল ফলাতে হবে। তার জন্য বেশি রাসায়ানিক সার দিলেই হবে না। কিছু নিয়ম মানতে হয়। এ ব্যাপারে কৃষকেরা এখনও ততটা সচেতন নন। কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যেই এই পরীক্ষামূলক চাষ।”
আগেও পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। তবে এ বার চাষের এলাকা বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। জঙ্গলমহলের প্রতিটি ব্লকে এমন পরীক্ষামূলক চাষ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে ২০০ হেক্টর করে জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ধান চাষ হবে। ১১টি ব্লকের ৬৬টি জায়গায় ৫ হেক্টর করে জমিতে ভুট্টা চাষও হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ২৯টি ব্লক। জঙ্গলমহলের বাইরে ২৫০ হেক্টর করে ৪৪টি জায়গায় ও ১০০ হেক্টর করে ৯টি জায়গায় ধান চাষ করা হবে। বেশ কিছু নতুন প্রজাতির বীজ চাষ করানো হবে। যার মধ্যে রয়েছে এমটিইউ ১০০১, এমটিইউ ১০১০, এমটিইউ ৭০২১ প্রভৃতি। কৃষি দফতর জানিয়েছে, ভাল ফলন পেতে হলে কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চলা অতি জরুরি। প্রথমত একই বীজ বার বার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কিন্তু বেশিরভাগ চাষিই তা মানেন না বলে কৃষি দফতরের অভিমত। এক বার সার্টিফায়েড বীজ কিনে ফসল ফলান। তার পর সেই ফসল থেকেই বার বার বীজ রাখেন ও চাষ করেন। এতে ওই বীজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর পরিবর্তন ঘটে এবং ফলন কম হয়। কৃষি দফতরের মতে, এক বার সার্টিফায়েড বীজ কিনে চাষ করার পরে সেই ফলন থেকে ২-৩ বারের বেশি বীজ রাখা উচিত নয়। নতুন সার্টিফায়েড বীজ কেনা উচিত।
বীজ-শোধন, মাটি পরীক্ষা, দূরত্ব বজায় রেখে চারাগাছ পোঁতার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা উচিত। কৃষি দফতর জানিয়েছে, সাধারণ ভাবে ধারণা, বেশি রাসায়নিক সার দিলেই বেশি ফলন হবে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। মাটি পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে মাটির স্বাস্থ্য কেমন। মাটির স্বাস্থ্য ফেরাতে কতটা অনুখাদ্য লাগবে। তা দেখলেই সারের পরিমাণ ঠিক করা সহজ হবে। পরীক্ষামূলক চাষের সময় কৃষকদের এই সব বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি দফতরের মতে, সাধারণ ভাবে হেক্টর প্রতি ৪-৫ টন ধান হলেই বলা হয় সঠিক ফলন হয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত ফলন হবে। এ ভাবেই ভুট্টারও পরীক্ষামূলক চাষ করা হবে। তবে এ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। কারণ, অনাবৃষ্টি। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরিতে এ বার সমস্যা হয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেও ভারী বৃষ্টিপাত হলে সমস্যা হবে না। কিন্তু তার মধ্যে যদি বৃষ্টির দেখা না মেলে, তখন পরীক্ষামূলক চাষেও সমস্যা হবে। |