ঢাকা সফরে হাসিনাকে বার্তা দিলেন রমেশ
সীমান্ত, তিস্তা জট দ্রুত খুলতে চায় ভারত
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি-সহ বকেয়া বিষয়গুলি দ্রুত সেরে ফেলার জন্য ভারত ঐকান্তিক ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দূত হিসেবে ঢাকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ এই বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদের আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনে সীমান্ত-চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি লোকসভায় পেশ করবে সরকার।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে শুধু কেন্দ্রে মনমোহন সরকারের অন্দরে নয়, এ পার-ও পার দুই বাংলাতেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের উষ্ণতা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব এ বার কার কাঁধে পড়বে?
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জয়রাম রমেশ। ঢাকায়। —নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তরফে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকেই এ দফায় সেই দায়িত্ব দিয়ে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের সফরে গত কালই বাংলাদেশ পৌঁছেছেন জয়রাম। আজ হাসিনার সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। আগামীকাল বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মনি-সহ সে দেশের মন্ত্রিসভার বেশ কিছু সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করবেন রমেশ। সূত্রের বক্তব্য, আজ জয়রামের সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি এই দু’টির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ইতিমধ্যেই অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। আর দেরি না করে এ বার এই দু’টির বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ করুক দিল্লি।
জয়রাম হাসিনাকে জানিয়েছেন যে, মনমোহন সিংহও যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে জটিলতা কাটিয়ে এগোতে আগ্রহী। কিন্তু ভারতের জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকেও হিসেবের মধ্যে রাখতে হচ্ছে মনমোহন-সরকারকে। তাঁর বক্তব্য, তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তির মতো বিষয় দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে মেঘের ছায়া ফেলেছে। যার আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছে অন্য অনেক সফল দ্বিপাক্ষিক বিষয়। জয়রাম হাসিনাকে জানিয়েছেন, সংসদের আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি পেশ করবে সরকার। তার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রয়োজনীয় অনুমোদনও শীঘ্রই নিয়ে নেওয়া হবে।
ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে মনমোহন সিংহের সরকারকে। আর সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিল পাশ করানোর জন্য প্রয়োজন হয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কাজ যে সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানেন ইউপিএ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি নিয়ে প্রধান শরিকদল তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তি রয়েছে। পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও প্রকাশ্যেই এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই ‘বাধা’ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা যে করা হচ্ছে, তা আজ হাসিনাকে জানিয়ে দিয়েছেন জয়রাম। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই জানিয়েছিল, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তিটি সই হয়ে যাওয়ার পরেও তা রূপায়িত হচ্ছে না। এর ফলে দু’দেশের মানুষের কাছেই ভুল বার্তা যাচ্ছে। তিস্তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি যে তাঁদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা স্পষ্ট করে দিয়ে আজ বৈঠকে রমেশ জানান, “মমতা কেন্দ্রীয় সরকার ও জোটে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। তাই তাঁর মতামত ছাড়া চুক্তি হবে না।”
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বৈঠকে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে, সন্ত্রাস দমন থেকে বাণিজ্য সব বিষয়েই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু এই দু’টি বিষয় নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা জটিলতা তৈরি করছে। দু’দেশের সম্পর্কের সার্বিক উন্নতির জন্যই এই জটিলতা দূর করা প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, ভারতের সংসদে বিলটি পেশ করাই শুধু নয়, তা যাতে পাশ করিয়ে দ্রুত ছিটমহল হস্তান্তরের কাজটি শুরু হয়, এখন সেদিকেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ঢাকা।
ঢাকা সফরে শেখ মুজিবর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি সংস্করণটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন জয়রাম। সেই বইটিতে হাসিনাকে দিয়ে সই করিয়ে নেন তিনি। রমেশের বইতে ইংরেজিতে সই করেই থামেননি হাসিনা। মূল বাংলায় লেখা বইটি তাঁকে উপহার দেন এবং বাংলায় সই করে!
শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল আগামিকাল দিল্লি আসছেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। ‘অটিজম’ রোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তিনি। এ ব্যাপারে ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে চান পুতুল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.