|
|
|
|
জিটিএ-র যাত্রা শুরু |
প্রতিশ্রুতির পাশে পরামর্শ, সতর্কবার্তাও |
কিশোর সাহা • দার্জিলিং |
সাহায্যের আশ্বাস, অঢেল। সেই সঙ্গে ‘অভিভাবকের মতো’ পরামর্শ। ‘সস্নেহ সতর্কবার্তা’ও। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর যাত্রা শুরুর দিন, শনিবার চিফ এগজিকিউটিভ বিমল গুরুঙ্গের পাশে এ ভাবেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। দু’জনেই বুঝিয়ে দিলেন, প্রশাসক হিসেবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বের কাছে তাঁরা আশা করেন, ‘স্বচ্ছতা’। চান, পাহাড়ে শান্তি এবং উন্নয়ন-প্রক্রিয়া বজায় রাখবেন নব্য প্রশাসকেরা। রাজ্য ও কেন্দ্রকে ‘প্রতি মুহূর্তে’ পাশে চাওয়ার দাবি জানানো গুরুঙ্গও এ-ও জানালেন, ‘স্বচ্ছ’ভাবে জনস্বার্থে জিটিএ-পরিচালনাকেই পাখির চোখ করতে চান তিনি।
জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিং নেতৃত্বাধীন ‘দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ’ (ডিজিএইচসি)-এর দু’দশকের শাসনকালে বিতর্ক, দুর্নীতি, অসন্তোষ, পরে মোর্চার উত্থান, আন্দোলন থেকে রক্তক্ষয় পর্যন্ত রাজনীতির নানা রং দেখেছে দার্জিলিং পাহাড়। শনিবার পাহাড়ের আবহাওয়াও দেখাল নানা মেজাজ। সকালে দেখা গেল ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পরে সব ঢেকে দেওয়া মেঘ। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। কিন্তু বেলা সাড়ে ১০টায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই ফের নীল আকাশ। |
|
জিটিএ-র যাত্রা শুরুর দিনে মোর্চা প্রধান বিমল গুরঙ্গের সঙ্গে
মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার দার্জিলিঙের ম্যালে। ছবি: সন্দীপ পাল |
কাঁটায়-কাঁটায় বেলা ১১টা ১৯ মিনিটে গুরুঙ্গকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। জিটিএ-র বাকি ৪৯ সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথগ্রহণের প্রাক্কালে গুরুঙ্গ বলেন, “৪৪ মাস আন্দোলন করেছি। নেতা ও কর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শহিদ হয়েছেন। পাহাড়ের মানুষও অনেক ক্ষতি সয়েছেন। তাঁদের সবার জন্য যেন কিছু করতে পারি, সে জন্য প্রতি মুহূর্তে কেন্দ্র ও রাজ্যকে সহযোগিতা করতে হবে।”
সহযোগিতা যে করবেন, পাহাড়ের জন্য নানা ঘোষণায় তা স্পষ্ট করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে। আমরাও দেব। এমন ভাবে কাজ করবেন, যাতে আপনারা টাকা চাওয়ার আগেই আমরা তা দিতে বাধ্য হই।” তাঁর বক্তব্য, “আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে দার্জিলিং পরিচিত নাম। আমরা চাই, সেখানে দার্জিলিঙের অবস্থান সুদৃঢ় হোক। সে জন্য এখানকার পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট,
পানীয় জল, বিদ্যুদয়ন-সহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা করাটা জরুরি। তাতে দার্জিলিং পাহাড়ে উন্নতি ও শান্তির এক নতুন যুগের সূচনা হবে। মনে রাখবেন, দার্জিলিং হাসলে সবাই হাসবে।” মোর্চার আন্দোলন পর্বে চা, পর্যটনের মতো একাধিক শিল্পকে ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়তে দেখেছে পাহাড়। সেই সময়ে উপার্জন কার্যত বন্ধ হতে বসেছিল স্থানীয় বাসিন্দা এবং নানা শিল্পে জড়িত ‘বহিরাগত’দের। সরাসরি সে প্রসঙ্গ না টানলেও বিষয়টি যে তাঁর অজানা নয় সেই ইঙ্গিত দিয়ে গুরুঙ্গকে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “স্থানীয় উন্নয়নে যেমন মন দেবেন, তেমনই এখানে অনেক বহিরাগত ব্যবসা করছেন-আগামী দিনেও করবেন, তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয় সেটাও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। মিলেমিশে থাকতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “অনেক সময় আপনাদের নতুন নানা চাহিদা তৈরি হতে পারে। তা নিয়ে ঝগড়া করবেন না। আপনারা ভাল করে চাইলে, আমরা নিশ্চয়ই যথাসাধ্য করব। মনে রাখবেন, আমরা এককাট্টা থাকলে অনেক দূর এগনো যাবে।” মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই গুরুঙ্গকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ‘সস্নেহে’ সতর্কও করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গুরুঙ্গ আমার ভাই। নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তবে ওঁকে পাহাড়ে পরিকাঠামো ও পর্যটনের প্রসারের জন্য জোর দিতে হবে। উন্নয়নের সুফল যেন পাহাড়ের গরিব আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছেও পৌছয়, সে জন্য মনোযোগী হতে হবে।” |
|
জিটিএ-র যাত্রা শুরুর দিনে পাহাড় পরিক্রমায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভ্যর্থনা
পেলেন স্থানীয় মানুষের, ফিরিয়ে দিলেন ভালবাসা। ছবি: অশোক মজুমদার |
গুরুঙ্গ বলেন, “জিটিএ-র সদস্যদের নিজেদের এলাকার সার্বিক উন্নয়নে মন দিতে হবে। সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।” মোর্চা অন্দরের খবর, রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য উন্নয়ন-প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে বলেও মোর্চা সভাপতি দলীয় স্তরে জানিয়ে দিয়েছেন।
গত বছর চারেকে পাহাড়ে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাব কাছ থেকে দেখেছেন কালিম্পঙের একটি বেসরকারি স্কুল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সুখবীর শর্মা। এ দিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখে বেরিয়ে বললেন, “গত চার বছরে কত বার যে নানা আন্দোলনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে, কত পড়ুয়াকে অভিভাবকেরা ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন! আগামী দিনে অন্য যা-ই আন্দোলন হোক, স্কুল যেন বন্ধ না হয়, সেটা জিটিএ নিশ্চিত করবে এ আশা রাখি।” কার্শিয়াঙের সরকারি চাকুরিজীবী হেমন্ত শেরপার প্রতিক্রিয়া, “দিনের পর দিন আন্দোলনের
জন্য সরকারি অফিস বন্ধ থাকলে আমজনতার যে কী হয়রানি হয়, আমরা বুঝি। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে জিটিএ-র প্রতিনিধিদের অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন।” দার্জিলিং ম্যাল চৌরাস্তার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পবন থাপার আশা, “পাহাড়ে যেন শান্তি থাকে। এই আমলে যেন খেয়ে-পরে বাঁচতে পারি!” রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, “আমরাও চাইব পাহাড়বাসীর যে প্রত্যাশা, জিটিএ-র প্রশাসকেরা তা পূরণ করবেন।”
জিটিএ-র অন্যতম পরিচালক তথা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির আশ্বাস, “আমাদের তরফে চেষ্টার ত্রুটি হবে না।”
তবে মোর্চা-বিরোধী শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে, “এটা পাহাড়। এখানে এই রোদ-এই মেঘ। আবহাওয়া বদলাতে সময় লাগে না।” |
জিটিএ-র জন্য |
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা |
• দু’দফায় রাজ্যের সাহায্য ১০৭ কোটি
• পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি হাব, ৩টি আইটিআই, ২টি পলিটেকনিক ও সৈনিক স্কুল
• গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলদের পুলিশে চাকরির বিষয়টি বিবেচনা
• মোর্চার বয়কট করা কর মকুবের ভাবনা
|
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা |
• বছরে ২০০ কোটি টাকা করে ৩ বছর সাহায্য
• পুলিশ-কনস্টেবল পদে নিয়োগে পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা |
|
|
|
|
|
|
|