গ্রামে ডাক্তারের অভাব মেটাতে বাম আমলে স্থির হয়েছিল, উচ্চ মাধ্যমিকের পরে তিন বছরের ডিপ্লোমা দিয়ে ডাক্তার তৈরি হবে। মানের প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনাটি বানচাল করে দিয়েছিল তদানীন্তন বিরোধী দল তৃণমূল।
তিন বছর পরে ছবিটা উল্টে গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ‘বিশেষজ্ঞ’ ডাক্তারের ঘাটতি মোকাবিলায় বর্তমান তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের সিদ্ধান্ত: এমবিবিএসদের দু’বছরের ডিপ্লোমা কিংবা এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করিয়ে ‘স্পেশ্যালিস্ট’ হিসেবে কাজ করানো হবে। আর এ বার সেই মানের প্রশ্ন তুলেই বিরোধিতায় নেমেছে বর্তমান বিরোধী সিপিএম। ফারাক একটাই সরকার বিরোধিতায় আমল দিচ্ছে না।
২০০৯-এর ডিসেম্বরে বিধানসভায় বাম সরকার যখন তিন বছরের ডিপ্লোমা-চিকিৎসক তৈরি সংক্রান্ত বিল পাস করে, তখন তৃণমূল যুক্তি দিয়েছিল, ডাক্তারির পাঁচ বছরের পড়াশোনা তিন বছরে হয় না। এ ভাবে ‘হাফ ডাক্তার’ তৈরি হবে। মূলত তাদের আপত্তিতেই বিলটি আইন হতে পারেনি। এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূল যখন বিশেষজ্ঞের ‘খরা’ কাটাতে ডিপ্লোমা-সার্টিফিকেটের কথা বলছে, তখন সিপিএমের যুক্তি, তিন বছরের স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনের সমতুল হতে পারে না দু’বছরের ডিপ্লোমা বা এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স। “এটা কি গ্রামের স্বাস্থ্য-পরিষেবার সঙ্গে সমঝোতা নয়?” প্রশ্ন সিপিএমের।
তবে সরকার অনড়। গত সপ্তাহে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অফিসে স্বাস্থ্য-কর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছে। ওই ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট কোর্সে অনুমোদন দেবে কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হবে ২০১৩ সালে। সার্টিফিকেট কোর্স আগামী সেপ্টেম্বরে। |
বাম আমলে প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের সঙ্গে এর ফারাক কী?
কাউন্সিলের সভাপতি ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাম সরকার আধা প্রশিক্ষণ দিয়ে আধা ডাক্তার বানাতে চেয়েছিল। আমরা পাঁচ বছরের ডাক্তারি কোর্স পাশ করা এমবিবিএসদের ডিপ্লোমা দিয়ে বিশেষজ্ঞ করতে চাইছি। এঁদের ভিত আগে থেকেই তৈরি।” নতুন কোর্সের চেহারাটা কেমন?
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য মৃণালকান্তি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দু’বছরের ডিপ্লোমায় মোট ৩০৫টি আসনের অর্ধেক সংরক্ষিত থাকবে সরকারি ডাক্তারদের জন্য। স্ত্রীরোগ, শিশুরোগ, চোখ, ত্বক, কান-গলা, রেডিওলজি, প্যাথলজি, অ্যানাস্থেশিয়ার মতো ১২টি বিষয়ে ডিপ্লোমা করা যাবে। এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্সে নিওনেটোলজি, নেফ্রোলজি, রেডিওলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও অ্যনাস্থেশিয়া পড়ানোর ১০টি করে আসন থাকবে। তবে ডিপ্লোমাধারী হোন বা সার্টিফিকেট মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র স্বীকৃতি না-থাকায় এঁরা অন্য রাজ্যে বিশেষজ্ঞের স্বীকৃতি পাবেন না।
সিপিএম আপত্তি তুলছে কেন?
রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বতর্মান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আমাদের ডিপ্লোমা-কোর্সে কেন্দ্র এবং এমসিআই অনুমতি দিয়ে দিয়েছিল। অসম-ছত্তীসগঢ়ে চালুও হয়েছে। এখানে ওঁরা করতে দিলেন না। অথচ ওঁরাই এখন এমসিআই-অনুমোদন ছাড়া ডিপ্লোমা স্পেশ্যালিস্ট বানাতে চাইছেন!” সূর্যবাবুর বক্তব্য, “তিন বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও ডাক্তারেরা কত অসুবিধায় পড়েন। এঁরা কী করবেন? এ তো গ্রামের লোকের স্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেখেলা!” স্বাস্থ্য-কর্তাদের বাখ্যা কী?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সিপিএম-কে অত মাথা ঘামাতে হবে না। ওঁদের সময়ে ভুলভাল পরিকল্পনা হতো। ইচ্ছে না-থাকলেও মানতে হতো। এখন যা ভাল মনে হবে, তা-ই করব।” |