সিলিং-অতিরিক্ত জমি: জটিলতার আশঙ্কায় ভূমি দফতর
একুশ দিনে অনুমতি দিতে চান শিল্পমন্ত্রী
বিনিয়োগকারীদের সুবিধা করে দিতে শিল্পের আবেদনপত্রের বহর ৯৯ পৃষ্ঠা থেকে কমিয়ে ৭ পৃষ্ঠা করেছে রাজ্য সরকার। এ বার সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার জন্য সরকারি অনুমতি দেওয়ার সময়সীমা তিন সপ্তাহের মধ্যে বেঁধে দিতে চাইছে শিল্প দফতর। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে আবেদনকারী যাতে ২১ দিনের মধ্যে সিলিংয়ের বেশি জমি কেনার অনুমতি পান, তার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি, শুধু এই কাজের জন্য এক জন অফিসার নিয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে।”
কিন্তু বেশি জমি রাখার আবেদনপত্রে তিন সপ্তাহের মধ্যে অনুমতি দিলে ভবিষ্যতে সেই জমি নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এর ফলে আইনি জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। বাম আমলে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমতি (ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ ওয়াই ধারায়) দেওয়া হত গুটিকয়েক শিল্পক্ষেত্রকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসে আইন সংশোধন করে তার পরিসর অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। খুব সম্প্রতি সেই আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিধিও পরিবর্তন করা হয়েছে।
ইচ্ছুক বিনিয়োগকারীরা সেই বিধি মেনে সরকার-নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য সিলিংয়ের বেশি জমি চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। এবং লাল ফিতের বাঁধন যাতে শিল্পায়নের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য শিল্পমন্ত্রী চান, আবেদন করার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে সিলিং-অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি দিয়ে দিতে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন তুলেছে ভূমি সংস্কার দফতর। তাদের বক্তব্য, ২১ দিনের মধ্যে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমতি দিতে গেলে (ভূমি দফতরকেই এই অনুমতি দিতে হবে) শুধু কাগজপত্রে জমির পরিমাণ-চেহারা-চরিত্র দেখেই ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হবে। সরেজমিনে পরীক্ষা করার কোনও সুযোগ থাকবে না। এখন সরকারের ‘অনুমতিপত্র’ হাতে নিয়ে কেউ যদি বিধিতে আরোপিত শর্ত লঙ্ঘন করে জলাশয়, বনভূমি বা পাট্টার অন্তর্গত জমি কেনে, তা হলে আইনগত জটিলতা তৈরি হবে বলে ভূমি দফতরের কর্তাদের একাংশের মত।
ওই কর্তারা বলছেন, যদি দেখা যায় কোনও শিল্প সংস্থা বিধি লঙ্ঘন করে জমি কিনেছে, তখন সিলিংয়ের অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি বাতিল হতে পারে। তখন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী আদালতে যেতে পারেন। অতীতে এমন নজির রয়েছে জানিয়ে ভূমি দফতরের এক কর্তা বলেন, “এতে কারও লাভ হবে না।” বরং আবেদন করার পরেই জমি পরীক্ষা করে অনুমতি দিলে শর্ত লঙ্ঘনের সম্ভাবনা কম থাকে। তাতে অবশ্য অনুমতি পেতে বেশি সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
শিল্প মহল অবশ্য সময় বেঁধে অনুমতি দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগতই জানিয়েছে। শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার কথায়, “সরকার শিল্প চায়। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করছে। এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ, বিচার পেতে দেরি হওয়ার অর্থ বিচার না পাওয়া।”
তবে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিতে আরোপিত দু’একটি শর্ত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন কোনও কোনও শিল্পপতি। যেমন, সংশ্লিষ্ট বিধিতে বলা হয়েছে, ১৪ ওয়াই ধারায় অনুমতি পাওয়ার ছ’মাসের মধ্যে জমি কেনার কাজ শেষ করতে হবে। সেই জমিতে কারখানা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে তিন বছরের মধ্যে। লিঙ্কম্যান সংস্থার কর্ণধার দীপক জালানের কথায়, “ছ’মাসের মধ্যে জমি কিনতে বলার কথা হাস্যকর। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে একলপ্তে বড় জমি প্রায় মেলে না। একটি বড় শিল্পের জন্য যদি ১০০ একর জমিও কিনতে হয়, তবে সেটা ছ’মাসে কখনই সম্ভব নয়। জমি কিনতেই হয়তো তিন বছর সময় লেগে যাবে।” এই সময়সীমার মধ্যে শিল্প গড়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে মন্তব্য না করলেও সঞ্জয় বুধিয়া বলেন, “সরকার যখন সময় বেঁধে কাজ করতে চাইছে, তখন শিল্প মহলকেও সেই আগ্রহটা বুঝতে হবে। তাদেরও সময় বেঁধে কাজ করতে হবে।” আর অ্যাসোচেমের পূর্বাঞ্চলের কো-চেয়ারম্যান এস এন নন্দীর মতে ‘এখনকার পরিস্থিতি’-তে এমন শর্ত থাকা উচিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.