চুরির সন্দেহে স্কুলের টিচার্স রুমের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নগ্ন করে তল্লাশি চালানোর অভিযোগ উঠল দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ছাত্রীটি দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে পুলিশের কাছে। পুলিশ শনিবার সকালে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ঘটনাটি ঘটে বীরভূমের সিউড়ি কালীগতি স্মৃতি নারী শিক্ষানিকেতনে। শনিবার সিউড়ি আদালতে দুই শিক্ষিকাকে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।
উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর গিরিবালা বালিকা বিদ্যালয়েও স্কুলের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিল। সিউড়ির দুই শিক্ষিকাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন স্কুলে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রীরা। অভিভাবকদের একাংশ সকালে থানায় গিয়ে গ্রেফতার না-করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর ব্যাগ থেকে ১৫০ টাকা ও একটি বাংলাদেশি মুদ্রা চুরি যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী জানিয়েছে, টিফিনের সময় এক শিক্ষিকা হঠাৎ এসে তাঁকে স্কুল ব্যাগ-সহ এক তলায় টিচার্স রুমে ডেকে নিয়ে যান। ডেকে নিয়ে যাওয়ার কারণ প্রথমে তাঁকে জানানো হয়নি। টিচার্স রুমে দুই শিক্ষিকা মিলে তাঁর কাছে জানতে চান, ওই ছাত্রীর চুরি যাওয়া বাংলাদেশি মুদ্রাটি তাঁর কাছে রয়েছে কি না। তখন ব্যাগ থেকে একটি বাংলাদেশি মুদ্রা বের করে ওই ছাত্রী শিক্ষিকাদের দেখিয়ে দাবি করেন, তাঁর বাবা বাসের কন্ডাক্টর। তাঁর কাছ থেকে সে মুদ্রাটি পেয়েছে। দুই শিক্ষিকা তা মানেননি। চুরি যাওয়া টাকার খোঁজে এ বার তাঁর ব্যাগে তল্লাশি চালানো হয় বলে অভিযোগ। |
ছাত্রীটির অভিযোগ, “টাকা না-পেয়ে অন্য শিক্ষিকাদের সামনেই এক শিক্ষিকা আমাকে বিবস্ত্র করে তল্লাশি চালান। শেষে চুরির টাকায় ফোন রিচার্জ করেছি কি না, তা দেখতে আমার মোবাইলও তিনি পরীক্ষা করেন। তত ক্ষণে স্কুলের অনেক ছাত্রীই ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল। তাই লজ্জায় আর ক্লাসে যেতে পারিনি। বাড়ি চলে আসি।” রাতে বাড়ির লোকেদের নিয়ে সিউড়ি থানায় গিয়ে ওই ছাত্রী দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার জেরে আর স্কুলে যাবে না বলেও ছাত্রীটি জানিয়েছে। যদিও শিক্ষিকাদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে স্কুলেই ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখায়। পরে কিছু ছাত্রী শিক্ষিকাদের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল করে আদালতে যায়।
অভিযোগ সর্ম্পকে দুই শিক্ষিকা মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করুন।” প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা রায় ও পরিচালন সমিতির সম্পাদক দেবাশিস পাল দাবি করেন, “শুধু জিজ্ঞাসা করা হয়। তল্লাশি করা হয়নি। ওই ছাত্রীর আচার-আচরণ নিয়ে আগে প্রতিবাদ করা হয়েছিল। তাই সে মিথ্যা অভিযোগ এনে দুই শিক্ষিকা ও আমাদের স্কুলের সম্মানহানি করেছে। এতে বাইরের লোকের প্ররোচনা রয়েছে।” পুলিশ তদন্ত না করে সাত তাড়াতাড়ি কেন গ্রেফতার করল, তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেছেন, “ছাত্রীটির অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেই আইন মেনে দুই শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” কল্পনাদেবী জানান, আজ, রবিবার এ ব্যাপারে স্কুলে অভিভাবকদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। |