সম্পাদকীয়...
(অ)ন্যায়বিচার
ন্ডন অলিম্পিকে দক্ষিণ কোরিয়ার চার জন, চিনের দুই জন এবং ইন্দোনেশিয়ার দুই জন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের শাস্তি কি ন্যায়বিচার বলিয়া মানিয়া লওয়া যায়? আপাতদৃষ্টিতে তাঁহারা অন্যায় করিয়াছেন। একটি ম্যাচ যথাসাধ্য খেলেন নাই। মনে করিবার কারণ আছে যে, তাঁহারা ওই খেলাটি জিতিবার জন্য খেলেন নাই, হারিবার জন্য খেলিয়াছেন। ম্যাচ গড়াপেটা নিশ্চয়ই এক ধরনের ‘অনাচার’। খেলোয়াড়ের কাজ আপন সামর্থ্য ও দক্ষতা অনুসারে সর্বশ্রেষ্ঠ খেলাটি খেলিবার চেষ্টা করা। তাহা না হইলে খেলার মান পড়িয়া যায়। বস্তুত ‘খেলোয়াড়ি মনোভাব’ কথাটি যে গুণগুলিকে চিহ্নিত করে, এই গুণটি তাহাদের অন্যতম। তদুপরি, অলিম্পিক কেবল খেলা নয়, একটি উচ্চ আদর্শের প্রতীক হিসাবে বন্দিত। অভিযুক্ত আট খেলোয়াড় সেই আদর্শকে কলঙ্কিত করিয়াছেন ইহা কেবল অলিম্পিকের কর্তাদের বিচারেই স্থির হয় নাই, দুনিয়ার আদালতেও ইহাই সাধারণ ভাবে সাব্যস্ত হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই।
কিন্তু এই বিচার অন্যায়বিচার, এই শাস্তি অসঙ্গত। যে যুক্তিতে খেলোয়াড়দের অপরাধী বলা হইতেছে, প্রকৃতপক্ষে সেই যুক্তিতেই তাঁহারা নিরপরাধ। নিয়ম মানিয়া খেলিয়া জয়ী হওয়াই যদি খেলার উদ্দেশ্য তথা খেলোয়াড়ের কর্তব্য হয়, তবে তাঁহারা সেই উদ্দেশ্য পূরণ তথা কর্তব্য পালনের জন্য যাহা করণীয়, তাহাই করিয়াছেন। অলিম্পিকে জয়ের অর্থ কী? সহজ এবং সরল উত্তর: পদক, বিশেষত সোনার পদক জয়। উহাই সমস্ত প্রতিযোগীর লক্ষ্য। ব্যক্তি, দল, দেশ, প্রত্যেকেরই দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে পদক তালিকার প্রতি, বিশেষত স্বর্ণপদকের প্রতি। খেলার বিভিন্ন পর্যায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছাইবার উপায়মাত্র। কোনও একটি পর্যায়ে কে কত ভাল খেলিল, তাহার স্বতন্ত্র কোনও মূল্য নাই, সেই ভাল খেলা যদি পদক জয়ের পথে আগাইয়া দেয়, তবেই তাহা মূল্যবান।
সাধারণ ভাবে, প্রত্যেকটি পর্যায়ে জয়লাভ করিলে পদক জয়ের সম্ভাবনাও বাড়ে, কিন্তু কখনও কখনও এমন অবস্থার সৃষ্টি হইতে পারে, যেখানে একটি পর্যায়ে পরাজিত হইলে সামগ্রিক সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনের নিয়মকানুন এমন ভাবে সংশোধিত হইয়াছে, যাহাতে সেই অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। প্রাথমিক পর্বের খেলায় জিতিলে পরের পর্যায়ে কঠিনতর প্রতিদ্বন্দ্বীর মোকাবিলা করিতে হইবে, এই আশঙ্কাতেই সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়রা ‘খারাপ’ খেলিয়াছেন। অর্থাৎ, তাঁহারা এই কারণেই ওই খেলাটিতে হারিতে চাহিয়াছেন, যাহাতে পরের পর্যায়ে তুলনায় সহজ প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হইতে পারেন এবং তাহার ফলে পদক জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। একটি ম্যাচের ক্ষুদ্র প্রেক্ষিতে দেখিলে যাহা অনাচার, সমগ্র প্রতিযোগিতার বৃহত্তর প্রেক্ষিতে তাহাই সদাচার। এই কারণেই ওই খেলোয়াড়দের শাস্তির সিদ্ধান্ত ভুল এবং অন্যায়। কর্তাদের বরং ভাবা উচিত ছিল, যে নিয়ম এমন পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে, সেই নিয়মটিই পরিবর্তন করা দরকার। শাস্তি যদি কাহারও প্রাপ্য হয়, তাহা ওই নিয়মের স্রষ্টাদের। খেলোয়াড়রা সেই নিয়মের শিকারমাত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.