মাত্র এক ঘণ্টা। তার মধ্যেই চলন্ত ট্রেনের কাপলিং খুলে ইঞ্জিন থেকে আলাদা হয়ে গেল হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী শতাব্দী এক্সপ্রেসের কামরা। গত ৩০ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পরে এই ঘটনায় ফের রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনে জৌগ্রাম ও নবগ্রাম স্টেশনের মাঝে ইঞ্জিন ও কামরার জোড় (কাপলিং) খুলে গিয়ে ইঞ্জিনটি প্রায় আড়াইশো মিটার এগিয়ে যায়। ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। জৌগ্রাম স্টেশন থেকে রেলকর্মীরা এসে ফের ইঞ্জিন ও কামরা জোড়া দেন। আধঘন্টা পরে ট্রেন রওনা হয়। |
যাত্রীভাড়া না বাড়ায় রেলের নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো তলানিতে গিয়ে ঠেকছে এবং এতে আখেরে যাত্রীরাই বিপদে পড়ছেন বলে বারবার বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, কেন বা কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছোনোর পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে।
এ দিনের শতাব্দী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা কিন্তু এই ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। সি-৩ কামরার যাত্রী, বীরভূমের বেলগ্রামের স্কুলশিক্ষক অলোক মিত্রের কথায়, “ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল দুপুর সওয়া ২টোয়। ছাড়ে ৩টে নাগাদ। দুপুরের খাওয়া সেরে সবে আইসক্রিম খাচ্ছি, ট্রেন থেমে গেল! নেমে দেখি, ইঞ্জিন উধাও।”
ওই কামরাতেই ছিলেন উত্তরবঙ্গের ওদলাবাড়ি পঞ্চায়েতের সিপিএমের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নন্দী। তাঁর দাবি, “ইঞ্জিন খুলে যাওয়ার পরেই ট্রেনে থাকা কেটারিং কর্মীরা বলতে শুরু করেন, সকালে হাওড়া আসার পথেও মালদহের কাছে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল!” যদিও রেল সূত্রে ওই খবর স্বীকার করা হয়নি। |
ট্রেনের সি-৪ কামরায় ছিলেন নিউ জলপাইগুড়ির টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুপার স্বপন বসু। তাঁর প্রশ্ন “একই ট্রেনে বারবার কী করে কাপলিং খুলে যায়? মোটা টাকা গুনে যেখানে এই ট্রেনে উঠতে হয়, এইটুকু নিরাপত্তা থাকবে না?” সি-২ কামরায় যাত্রী, নিউ জলপাইগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা শেখর ভৌমিক বলেন, “আমার স্ত্রী আর মেয়ে ভয় পাচ্ছে, মাঝপথে আবার এমন ঘটবে না তো?” একই আশঙ্কায় ভুগছিলেন কলকাতা থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পিয়া চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “রাতে ফরাক্কা ব্যারাজের মতো কোথাও এমন কিছু ঘটলে কী হত, ভাবতেও ভয় করছে।”
পূর্ব রেল সূত্রে বলা হয়েছে, কেউ হতাহত হননি। তবে ট্রেনের এস-৫ কামরায় যাত্রী গোপা সোম ও নিউ জলপাইগুড়ির বন বিভাগের অফিসার অরুণাচল বসু বলেন, “চলতে-চলতে আচমকা ট্রেনের গতি কমে যাওয়ায় অনেক যাত্রী সিট থেকে পড়ে যান। অনেকের মাথায় বাঙ্ক থেকে বাক্স-প্যাঁটরা পড়ে। বেশ কয়েক জন চোট পেয়েছেন।”
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যাচ্ছিলেন সুব্রত দাস ও মনিকা দাস। নিউ জলপাইগুড়ির বাড়িতে ফিরছিলেন দীপা সিংহ। মালদহে বাড়ি ফিরছিলেন নরেন্দ্র বসু। তাঁদের সকলেরই প্রশ্ন, “রেলে যদি নিত্য দুর্ঘটনা লেগে থাকে, যাত্রীরা চড়বেন কোন ভরসায়?”
উত্তর অবশ্য এখনও অজানা। |