আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি ডাকবিভাগ। এ বার সেই টাকা তোলার জন্য পুরুলিয়া জেলার সদর ডাকঘর ও ডাক-কর্মী আবাসন নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ডাকবিভাগের নয়াদিল্লির ডিরেক্টর জেনারেল ও পুরুলিয়ার সুপারিন্টডেন্টকে নোটিশও দিয়ে নিলামের ব্যপারে জানিয়েও দিয়েছে।
পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে ডাক বিভাগের কর্মী-আবাসন তৈরির জন্য ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে ১.৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। কাঠা প্রতি ৩ হাজার ৩৩০ টাকা হিসেবে জমির মোট দাম নির্ধারণ করা হয় ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। ওই বছরেই ডাকবিভাগকে জমিটি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের পরিমাণে সন্তুষ্ট না হয়ে ওই বছরেই পুরুলিয়া জেলা আদালতে মামলা দায়ের করেন জমির মালিক মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। ১৯৯৬ সালে আদালত নির্দেশ দেয় কাঠা প্রতি জমির দাম ১২ হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে মৃত্যুঞ্জয়বাবুদের মোট ২৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৫৪ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু তাঁদের সেই টাকা দেওয়া হয়নি। এরপর ২০০৮ সালে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ছেলে সুপ্রতীক চট্টোপাধ্যায় ও মাণিক চট্টোপাধ্যায় ফের পুরুলিয়া আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁরা বলেন, “জেলা প্রশাসন আমাদের জমি অধিগ্রহণ করেছিল বলে চলতি বছরের মার্চ মাসে আদালত জেলা প্রশাসনের তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ দেয়। তারপরেও আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়নি।” তাঁদের দাবি, চলতি বছরের এপ্রিল মাস পযর্ন্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। |
পুরুলিয়ার জেলা ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে ডাকবিভাগকে সত্ত্বর ওই টাকা মিটিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু ডাকবিভাগ তা না দেওয়ায় পরে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৫২২ টাকা। তাই পুরুলিয়া সদর ডাকঘরের অফিস ও কর্মী আবাসন নিলাম করে টাকা তোলার জন্য বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী গত ২৪ জুলাই জেলার সার্টিফিকেট অফিসারের কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। নিলামের নোটিশ ডাকবিভাগ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” পুরো বিষয়টিতে ডাকবিভাগের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট জেলা প্রশাসন। ৫০ লক্ষ টাকার একটি স্থায়ী আমানত আদালতে গচ্ছিত রাখায় এখন তাঁরা ওই তিনটি অ্যাকাউন্টে লেনদেন করার অনুমতি পেয়েছে।
জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “ওই জমির ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এখন ৫০ লক্ষ টাকার বেশি। আদালত যাদের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, ওই টাকা তাঁদের দেওয়ার জন্য পুরুলিয়ায় ডাকবিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট ও নয়াদিল্লিতে ডাকবিভাগের ডিরেক্টর জেনারেলকে জানানো হয়। তাদের জানিয়েছি, হয় টাকা দিতে হবে, নতুবা প্রশাসন নিলাম করে এই টাকা তুলবে।” তিনি জানান, উন্নয়নের কাজের টাকা স্থায়ী আমানতে রাখা হলেও ওই টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া সম্ভব নয়। অতীতে তাঁরা ডাকবিভাগকে একাধিকবার এই টাকা দিতে লিখিত ভাবে অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু তা তারা কানে তোলেননি বলে অভিযোগ। পুরুলিয়া ডাকবিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট বিধানচন্দ্র আচার্য বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয় জানানো হয়েছে।”
জেলাশাসক বলেন, “প্রথমে সদর ডাকঘর ও ডাকবিভাগের কর্মী-আবাসন নিলাম করা হবে। তাতে ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা না উঠলে জেলায় ডাকবিভাগের অন্য যা সম্পত্তি রয়েছে তাও নিলামে চড়ানো হবে। ২৪ অগস্টের মধ্যে ডাকবিভাগ টাকা না দিলে নিলামের কাজ শুরু করা হবে।” |