দীপের নীচে বাংলার শ্যুটিং অন্ধকারে
ব্বই বছরের এক লন্ডন ফেরত অলিম্পিয়ানও আক্ষেপ করছেন। কপাল চাপড়াচ্ছেন লস অ্যাঞ্জেলিস অলিম্পিকে অংশ নিয়ে আসা শ্যুটার।
গোরাচাঁদ শীলের স্মৃতিতে এখনও রীতিমতো তাজা শেষ অলিম্পিকের লন্ডন। ৬২ বছর আগে ওই শহরে গিয়ে শৈলেন মান্না, লেসলি ক্লডিয়াসদের সঙ্গে তিনি থাকতেন লন্ডনের রিচমন্ড পার্কে। একবার রাস্তা হারিয়ে ফেলায় পুলিশ তাঁকে ট্যাক্সিতে পৌঁছে দেয় কোনও টাকা না নিয়ে। বাইশ, তেইশ দিনের জাহাজ যাত্রার পরে এডেন বন্দরে পৌঁছনোয় ভারতীয়দের জন্য ছিল একুশ তোপধ্বনি।
সিমলা রোডের বাড়িতে বসে ওয়াটার পোলোর অলিম্পিয়ান গোরাচাঁদ শীল নিজের মনের আয়নায় দেখছেন বাঙালির সাম্প্রতিকতম অলিম্পিয়ানকে। অল্পের জন্য জয়দীপ কর্মকারের পদক হাতছাড়া হওয়ার খবরে বৃদ্ধ হতাশ গলায় বলেন, “এ বারও তা হলে হল না!” তাঁর স্মৃতিচারণে চলে আসে জয়দীপ লন্ডনে যাওয়ার আগের ঘটনা, “ছেলেটির বাবাকে চিনি। ও আমায় ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটে বলেছিল, আমার ছেলে অলিম্পিকে যাচ্ছে। আশীর্বাদ করুন। যাওয়ার আগেও একবার ফোন করেছিল।” তার পরে আশার গলা, “অলিম্পিকের লড়াইটা সহজ নয়। ও যে চার নম্বর হল, এটাই অনেক।”
নিখাদ বঙ্গসন্তানদের প্রথম অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শ্যুটার সোমা দত্ত। একাধিক অলিম্পিকে গিয়েও সোনা আসেনি। সেই সোমা এখন আমেরিকায়। বাংলা, কলকাতার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেন না। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের হল অব ফেমে সোমা দত্ত উইলিয়ামের নাম পাওয়া যায়। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলিস অলিম্পিকে ভারতের হয়ে গেছিলেন শ্যুটার ভগীরথ সামুই। হন ৮৯ জনের মধ্যে ৩৯। এখন দিশেরগড় পাওয়ার কর্পোরেশনের সিকিউরিটি অফিসার ভগীরথ শান্তিনিকেতন থেকে আসানসোল ফেরার পথে বাসে কার্যত মাথা চাপড়াচ্ছিলেন, “সোল এশিয়াডে এক পয়েন্টের জন্য চার নম্বর হয়েছিলাম। এক পয়েন্টের জন্য এক লাখ টাকা হারিয়েছিলাম। জয়দীপ একটা পজিশনের জন্য এক কোটি হারাল। তবে ভবিষ্যতে বাংলার শ্যুটাররা ওকে দেখে উদ্দীপ্ত হবে। আর মনে রেখে দেবে।”
বাংলার শ্যুটিংয়ের ছবির আদৌ কোনও উন্নতি হবে জয়দীপের চাঞ্চল্যকর সাফল্যের জন্য?
যে রাজ্য থেকে অলিম্পিক পদক প্রায় পেয়ে যাচ্ছিলেন জয়দীপ, সেখানকার শ্যুটিংয়ের ছবিটা ঠিক কী? এক কথায় করুণ বললেও কম বলা যায়। গোরাচাঁদ শীলেরা লন্ডন যাওয়ার সময় যেমন কাঠামো ছিল, তার তুলনায় বেশি উন্নতি হয়নি। বাংলায় সাকুল্যে চারটে মাত্র শুটিংয়ের ক্লাব। পরিকাঠামো সবচেয়ে ভাল যেখানে, সেই আসানসোল রাইফেল ক্লাবে তেমন কোনও শ্যুটার নেই। ইছাপুর রাইফেল ক্লাব কর্মীদের জন্য। শ্রীরামপুর রাইফেল ক্লাবে দেশের সিভিলিয়ানদের অন্যতম শ্যুটার পঙ্কজ পোদ্দার প্র্যাক্টিস করেন। তাঁকেই প্রায় তৈরি করে লাল ফ্ল্যাগ টাঙিয়ে প্রস্তত হতে হয়। শ্যুটিং শেষে সব গোছাতেও হয় তাঁকেই। জয়দীপ কর্মকার, সোমা দত্ত বা কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায় যেখানে প্র্যাক্টিস করে বড় হয়েছেন, বেলগাছিয়ার সেই নর্থ ক্যালকাটা শ্যুটিং ক্লাব মন্দের ভাল। কিন্তু সেখানেও এশিয়ান গেমস ছেড়ে দিন, সাফ গেমসও হওয়া কঠিন। সরকারি আনুকূল্য সেখানেও পড়েনি।
জয়দীপের পরে তা হলে বাংলার সেরা শ্যুটার কে? বাংলার শ্যুটারদের খবর যাঁর নখদর্পণে, সেই শ্যুটিং কোচ স্বপন স্যানালও বলতে পারলেন না। কেননা তেমন কোনও নামই নেই। সোমা দত্তের সমসাময়িক, কমনওয়েলথ গেমসের পদক জয়ী শ্যুটার এখনও শুটিং করছেন। ২০১০ সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। হয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। কুহেলি নাম করলেন বছর পনেরোর মাম্পি দাসের। আর কোনও নামই তো নেই!
জয়দীপের জন্য হাহাকার করতে করতে বিজয় কুমারদের সাফল্য দেখে উত্তেজিত স্বপন, পঙ্কজরা। বললেন, “এ বার আপনারা ক্রিকেট, ফুটবল ছেড়ে শ্যুটিংটা নিয়ে একটু লিখুন প্লিজ।” কুহেলি ট্রেনিং করেন জয়দীপের ক্লাবেই। “আর ক’দিন পরে হয়তো বলা হবে ভারতের জাতীয় খেলা শ্যুটিং। ব্যক্তিগত খেলাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ,” বলার পরে তাঁর মন্তব্য, “আমরা খেলা শুরু করার সময় জাতীয় শ্যুটিংয়ে ৩০০ প্রতিযোগী থাকত। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ২০০০ এ। বাংলার ছবিটা অত ভাল নয়। তবে আমাদের বেলগাছিয়ার ক্লাবে এখন দু’দিন অন্তরই বাচ্চাদের অভিভাবকরা খোঁজ নিতে আসছে।”
বাংলার শুটিংয়ে এটাই একমাত্র আলোর দিক। জয়-দীপের নীচেও বাকিটা আঁধার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.