নিজেকে ট্র্যাজেডির নায়ক
মনে করছেন না জয়দীপ
ঠোঁট এবং কাপের ফারাকটা ছিল এক চুলের।
অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক জয়ের সামনে পৌঁছেও শেষপর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তা সত্ত্বেও নিজেকে ট্র্যাজেডির নায়ক মানতে নারাজ জয়দীপ কর্মকার। তিনি বরং ব্যর্থতার মধ্যে সাফল্য খুঁজে পাচ্ছেন। নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও যেভাবে লন্ডন অলিম্পিকে নিজেকে উজ্জ্বল আলোর নিচে নিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি, তাতে উচ্ছ্বসিত সবাই।
“আমি সেরা পারফরম্যান্সটা করেছিলাম। তাতেও পদকটা পেলাম না। খারাপ লাগছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম দিকে এত পিছিয়ে যাই যে শেষ দিকে ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তবে আমি খুশি অনুশীলনে যে রকম মারতাম সেটা অলিম্পিকে এসেও মারতে পেরেছি বলে,” লন্ডনে ফোনে ধরা হলে আনন্দবাজারকে বলে দিলেন জয়দীপ।
শেষরক্ষা হল না। লন্ডনে শ্যুটিং রেঞ্জে জয়দীপ। ছবি: উৎপল সরকার।
সবে মাত্র রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকের শ্যুটিং রেঞ্জ থেকে অলিম্পিক শেষ করে বেরোচ্ছিলেন। যাবেন ডোপ টেস্ট দিতে। বোঝাই যাচ্ছিল হতাশা চাপছেন অনেক কষ্টে। তার মধ্যেই নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ারও চেষ্টা করছিলেন জয়দীপ। বললেন, “দেখুন চার রাউন্ডের পর তো মনে হয়েছিল আর হল না। কিন্তু পরপর দু’টো রাউন্ডে ১০০ মারার পর আবার উল্টো ভাবনাটা হচ্ছিল। মনে হল হয়তো পারব। হল না। শেষ রাউন্ডে আমার চেয়ে ভাল স্কোর করল স্লোভানিয়ার রাজমন্ড। রেঞ্জে এরকম তো হয়ই। এত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও যে চতুর্থ হতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে গর্বের।” বাংলার আর এক নামী শ্যুটার কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায়ও জয়দীপকে সমর্থনের করলেন। বলছিলেন, “জয় পদক পাবে এটা তো আমরা কেউই ভাবিনি। অলিম্পিকে চতুর্থ হওয়াটা বড় ব্যাপার। জয় সেটা করেছে। দেশে সেরা ছিল ৫৯৯। করেছে ৫৯৫।”
হিমাচলপ্রদেশের শ্যুটার বিজয়কুমারের মতো ভিকট্রি স্ট্যান্ডে দাঁড়াতেই পারতেন জয়দীপ। কিন্তু মোক্ষম সময়ের সামান্য ভুলে ফস্কে গেল তাঁর আকাঙ্খিত পদকটাই।
গগন নারঙ্গ যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেন না, আপনি পারলেন কী করে? “গগন আমার একটু আগে ব্যর্থ হয়েছিল। কোয়ালিফাইংয়ের শ্যুট আউটটা যখন মারতে যাচ্ছিলাম তখন বুকটা কেমন কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল মাথার উপর একটা পাথর চাপা দিয়েছে কেউ। প্রচন্ড চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যোগ্যতা অর্জন পর্ব উতরে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষটা ভাল হল না,” নিয়মিত আই প্যাড, ফেসবুক, টুইটারে অভ্যস্ত জয়দীপ যেন কথা বলার সময় কেমন আনমনা।
অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলার সাফল্য
• নর্মান প্রিচার্ড (১৯০০, ২০০ মিটার ও ২০০ হার্ডলসে জোড়া রূপো)
• লিয়েন্ডার পেজ (১৯৯৬, টেনিসে ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জ)
• জয়দীপ কর্মকার (শ্যুটিং, ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনে চতুর্থ) (ব্রিটিশ জাত নর্মান প্রিচার্ড জন্মেছিলেন কলকাতায়। পড়তেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৯০৫-এ ভারত ছেড়ে চলে যান)
দুর্দান্ত স্কোর করে ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনের মুলপর্বে গিয়েও শুরুতেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিলেন জয়দীপ। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা অনেকটাই এগিয়ে। ফলে ব্রোঞ্জের জন্য জয়দীপের সঙ্গে লড়াই চলছিল স্লোভানিয়ার রাজমন্ড দেভেবেক। শেষ রাউন্ডে জয়দীপ ১০.৬ স্কোর করলেই ব্রোঞ্জ পেয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি মারেন ১০.৪। জয়দীপ বলছিলেন, “জীবনে বহু টুর্নামেন্টে খেলেছি। কিন্তু এ রকম চাপ অনুভব করিনি। অলিম্পিক ব্যাপারটাই যে সবার চেয়ে আলাদা সেটা টের পাচ্ছিলাম”
পাবেনই বা না কেন? অলিম্পিকের জন্য আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও জার্মানিতে ট্রেনিং নিয়েছেন। নিখাদ বঙ্গসন্তানের হাতে পদক জয়ের আশায় শুক্রবার দুপুরে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন অনেকেই। ১/৯৬ এন এন ঘোষ রোডের আনন্দপল্লির নিবেদিতা অ্যাপার্টমেন্টের কর্মকার পরিবারের মতোই। ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হওয়ার পর এক সময়ের শ্যুটার বাবা শান্ত কর্মকারের মতোই আক্ষেপ করছিলেন জয়দীপের ছেলে আদ্রিয়ান। “বাবা আর একটা পয়েন্ট মারলেই পদকটা পেয়ে যেত।” বাঙালির আক্ষেপের নির্যাস যেন ছিটকে বেরোচ্ছিল সাত বছরের গলা দিয়ে।
জয়দীপ যে সেটা জানেন না, তা নয়। ব্যর্থ হওয়ার পর সান্ত্বনা খুঁজতে ফোন করেছিলেন বাড়িতে। নিজের পরের স্বপ্নটা জানাতে। সেটা গোপন করেননি সংবাদমাধ্যমকেও। “অলিম্পিকটা হল না। সরকার যদি সাহায্য করে, তা হলে এশিয়াডে চেষ্টা করব।” বলতে বলতে ডোপ টেস্টের ঘরে ঢুকে পড়েন ভারতীয় খেলাধুলোর নতুন ট্র্যাজিক নায়ক।

জয়দীপকে নিয়ে আপ্লুত রাঠৌর
অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? অলিম্পিক শ্যুটিংয়ে জয়দীপ কর্মকারের কীর্তির জন্য আপ্লুত রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। আথেন্স অলিম্পিকেরুপো জয়ী শ্যুটার শুক্রবার বলছিলেন, “জয়দীপের আত্মবিশ্বাসই ওকে এত বড় সাফল্য দিয়েছে। বিজয় কুমার কালো ঘোড়া ছিল। কিন্তু জয়দীপ এত ভাল ফল করবে, সেটা স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি। শুনেছি, টাকার অভাবে অনুশীলনই করতে যেতে পারছিল না। শেষ মুহূর্তেও প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। এত ঝড়-ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে এত বড় সাফল্য পেয়েছে। ওর জন্য আমি গর্বিত।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.