উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পুর-উদ্যোগ
নজরে হাজিরা
ক্ষ্য কর্মসংস্কৃতির পরিবর্তন। তাই হাজিরা ব্যবস্থাটাকেই আমূল বদলে ফেলে কর্মীদের উপস্থিতির হার বাড়াতে চাইছে বরাহনগর পুরসভা।
অতি সম্প্রতি এই পুরসভার দফতরে চালু হয়েছে ‘বায়োমেট্রিক’ পদ্ধতির অত্যাধুনিক হাজিরা ব্যবস্থা। নয়া ব্যবস্থায় দফতরে ঢোকার মুখে পাশের একটি ঘরে আঙুলের ছাপ গ্রহণের চারটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। খরচ পড়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, আপাতত কর্মীদের অভ্যস্ত করার জন্য তিন মাস নতুন ব্যবস্থার পাশাপাশি সচল থাকবে খাতায় হাজিরার পুরনো ব্যবস্থাও।
পুরসভা জানাচ্ছে, কোনও কর্মী সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে ঢুকলে তা ‘লেট’ বলে গণ্য করা হয়। তাই পৌনে ১১টার পরে যন্ত্রে আঙুল ছোঁয়ালে তাঁকে ‘অ্যাবসেন্ট’ বলে ধরা হচ্ছে। এক মাসে তিনটি ‘লেট’ হলে নষ্ট হবে একটি ক্যাজুয়াল লিভ। এই নিয়ম আগেও ছিল। কিন্তু এত কর্মীর উপরে সে ভাবে অনবরত নজরদারি সম্ভব ছিল না। নিয়ম ভাঙার ফাঁকফোকর ছিল প্রচুর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, “পুরনো ব্যবস্থায় দেরিতে এসে হাজিরা খাতায় এক-দু’ঘণ্টা সময় এগিয়ে লিখে সই করার মতো নজির ছিল। এখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না এলে যন্ত্রে ঢোকানো সফ্টওয়্যারই কর্মীদের ‘লেট’ বা ‘অ্যাবসেন্ট’ চিহ্নিতকরণের কাজটা করছে।”
কিছু কর্মীর অভিযোগ, তাতেও যে কারচুপি পুরোপুরি আটকানো গিয়েছে, তা মোটেও নয়। নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে ঢুকেও আউটডোর ডিউটি দেখিয়ে অনেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ঢুকছেন আবার ছুটির সময়, অর্থাৎ বিকেল ৫টার ঘণ্টাখানেক আগে। সে ক্ষেত্রে কলকারখানার মতো পুরসভাও দরজা বন্ধ করে এমন কর্মীদের আটকাক, দাবি তুলছেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, “পুরসভা তো পাবলিক প্লেস, কলকারখানার মতো নয়। এখানে সকলের জন্য দরজা খোলা রাখতেই হবে। অফিসের কাজে কেউ বাইরে বেরোলে সংশ্লিষ্ট দফতরকে তা জানিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। আর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আগে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট দফতর এবং আমার কাছে চিঠি দিয়ে রাখতে হবে।” কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে কর্মীদের হাজিরার উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। অপর্ণাদেবীর মতে, “আমি এসেও বহু কর্মচারীকে নির্দিষ্ট সময়ের দুই-আড়াই ঘণ্টা পরে হেলতে-দুলতে অফিসে ঢুকতে দেখেছি। বার বার বলেও লাভ হত না। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পর থেকে গত এক মাসে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। এখন সকাল সাড়ে ১০টায় অফিসে ঢুকলে চারদিক গমগম করে।”
যদিও পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের অশোক রায় বলেন, “এটা কর্পোরেট অফিস নয়। নতুন ব্যবস্থার সুফল পাওয়া পুরসভার ক্ষেত্রে অসম্ভব। এখানে ২০ শতাংশ লোক অফিসে বসেন। বাকি ৮০ শতাংশ বাইরে ডিউটি দেন। তাঁদের যখন-তখন বেরোতে হয়, ঢুকতে হয়। মেশিনে হাত ছুঁইয়ে অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, এমন কর্মীদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও তার চেয়ারম্যান পারিষদকে কড়া নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি, পুরসভার সদর দরজায় নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন করতে হবে। তা না হলে ব্যবস্থাটা প্রহসনে পরিণত হবে।” জবাবে পুর-সচিব সমীর বাগচী বলেন, “নির্দিষ্ট বিভাগ ও এসট্যাব্লিশমেন্ট বিভাগের তরফেও যন্ত্রের হাজিরা তথ্য নজরদারি করা হচ্ছে।” অপর্ণাদেবীর দাবি, “প্রথম দিকে একটু সমস্যা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাকি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।”
এর সঙ্গেই মাস কয়েক যাবৎ ‘ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা’র মাধ্যমে নজরদারি চলছে এই পুরসভায়। ‘পিডব্লিউডি’, ‘অ্যাসেসমেন্ট’, ‘লাইসেন্স’, ‘ক্যাশ’, ‘কালেকশন’, ‘স্বাস্থ্য’, ‘জল’, ‘মোটর ভেহিকল্স’-সহ মোট ৩৮টি জায়গায় বসেছে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ক্যামেরা। সিসিটিভি-টি রয়েছে পুরপ্রধানের ঘরে। এই ব্যবস্থাপনায় প্রথম সাফল্য এসেছে বিরোধী দলনেতার ‘মোবাইল চুরি’ আটকে। বিরোধী দলনেতা অশোকবাবুর মোবাইলটি পুরসভার ভিতর থেকেই চুরি হয়ে যায়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ‘সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ধরা পড়ে বহিরাগত চোর। উদ্ধার হয় মোবাইলটি। বিষয়টি স্বীকার করছেন অশোকবাবুও। পুরপ্রধান অপর্ণাদেবীর দাবি: “ক্যামেরা বসে যাওয়ায় কর্মীরাও এখন অনেক সচেতন। দফতরে বসে সরাসরি উপঢৌকন নেওয়ার মতো কাজ আর হয় না। পাশাপাশি, কোনও কর্মীকে অফিসে ঘুমোতে দেখলে তাঁকে ডেকে সচেতন করে দেওয়া হয়। গেট থেকে নজরদারি শুরু হওয়ায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়েছে। কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে, সবটাই নজরে থাকছে।”
কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর এই উদ্যোগে সম্প্রতি নাম লিখিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভাও। মাস ছয় যাবৎ সেখানেও চালু হয়েছে ‘সিসিটিভি’র নজরদারি এবং ‘বায়োমেট্রিক’ হাজিরা পদ্ধতি। দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান অঞ্জনা রক্ষিতের মতে, “হাজিরা ব্যবস্থা আগের থেকে ভাল হয়েছে। ক্যামেরার রেকর্ডিং দেখে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.