|
|
|
|
ব্যবসায়ীর খুনে আবার বেআব্রু হাওড়ার সুরক্ষা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় বাবু বাগচীর খুনের ঘটনা ফের হাওড়ায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ কমিশনারেটকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।
এলাকায় ‘পরোপকারী’ বলে পরিচিত ওই কাঠ ব্যবসায়ীর খুনের প্রতিবাদে এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে কয়েকশো বাসিন্দা বৃহস্পতিবার রাতে মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে প্রায় রাত আড়াইটে পর্যন্ত। পরে পুলিশ মৃদু লাঠি চালিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এই খুনের প্রতিবাদে শুক্রবারও এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ হয়ে যায় বাস চলাচল। অবরোধ করে রাখা হয় রাস্তাঘাট, অলিগলি। ফলে বনধের চেহারা নেয় বটানিক্যাল গার্ডেন চত্বর।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ বাড়ির সামনেই কয়েক জন মোটরবাইক-আরোহী দুষ্কৃতী ঘিরে ফেলে বাবুকে। তাঁর কোলে তখন ছিল বছর দুয়েকের শিশুকন্যা সৌমিতা। দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করলেও মেয়েকে বুকে আগলে রাখেন তিনি। শিশুটি বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। |
|
বাবু বাগচীর মেয়ে সৌমিতা |
কয়েক দিন আগে জগাছায় প্রকাশ্যে ধর্ষণ, শিবপুরে একটি পাড়ায় ঢুকে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে লক্ষ করে গুলি চালানোর ঘটনার পরে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনা কার্যত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতাকে বেআব্রু করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বিভিন্ন ঘটনাকে রাজনীতির মোড়ক দিতে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবু এক সময়ে সিপিএমের সদস্য ছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বার পুলিশের কাছে তোলাবাজি-সহ বিভিন্ন দুষ্কর্মের অভিযোগ উঠেছিল। পরে সিপিএমের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ায় তিনি দল ছেড়ে দেন। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক নানা কাজও শুরু করেন বাবু। বাড়ির সামনে একটি ক্লাব তৈরি করে নানা ধরনের খেলাধুলোর আয়োজন করতেন তিনি।
সম্প্রতি বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় দুষ্কৃতী-রাজ বেড়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বাবু। এ জন্য দিন ১৫ আগে তাঁর বাড়িতে এসে খুনের হুমকি দিয়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। এই সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পরে ভোগে ও দিলু নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেল হেফাজত হয়। পরে অবশ্য জামিনে মুক্ত হয়ে যায় তারা।
এ দিন মৃত ব্যক্তির পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাবু পুলিশের কাছে কিছু দিন আগে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা দেয়নি। আর সেই কারণেই দুষ্কৃতীরা সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। যদিও ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও অন্যান্য দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “এই খুনের পিছনে রয়েছে তোলাবাজি ও এলাকা দখলের লড়াই। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |
|
|
|
|
|