বৃষ্টির হার কমতে পারে, আশঙ্কা মন্টেকের
বৃষ্টির ঘাটতি আর মিটবে না এ বছরে, জানাল মৌসম ভবন
ত দোষ প্রশান্ত মহাসাগরের সেই দুষ্টু ছেলে ‘এল নিনো’-র!
তার দাপাদাপিতে প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে রয়েছে ০.৫ থেকে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহবিদদের বড় একটা অংশের ধারণা, প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের ওই উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ প্রভাবিত করেছে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহকে। যার ফলে জুন, জুলাই মাসে ওই দুই সমুদ্রেই এ বার একটিও নিম্নচাপ তৈরি হয়নি। যার ফলে অগস্টের প্রথমে এ বার সারাদেশে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে ১৫ শতাংশ কম!
দেশের বর্ষা-পরিস্থিতি যে এ বছর আর ভাল হবে না, সেটা শুক্রবার জানিয়েই দিল দিল্লির মৌসম ভবন। জুলাই মাস পর্যন্ত তারা বলে যাচ্ছিল, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ থাকবে ৯৬ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু
জুলাই মাসের শেষে দেখা গেল তা ৮৭ শতাংশ ছাড়ায়নি। এ দিন মৌসম ভবন জানিয়ে দিল, অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে আশানুরূপ বৃষ্টি হবে না। অর্থাৎ জুলাই মাসের শেষে বর্ষার যে ঘাটতি সারা দেশে ছিল, তা তেমন কমবে না। অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে কৃষকেরা মাঠে নেমে কোমর বেঁধে চাষ করতে পারবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আবহবিদেরা। এ দিনের পূর্বাভাস জানাচ্ছে, সে গুড়ে বালি।
আবহাওয়ার এই হঠকারিতায় ভারতের ছয়টি রাজ্য এ বার খরার মুখোমুখি। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ বিপ্লবের দুই রাজ্য পঞ্জাব এবং হরিয়ানা। আর যে সব রাজ্যে বর্ষা এ বার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেগুলি হল রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক। এই সব রাজ্যে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে ২৫ শতাংশ, কোথাও বা ৫০ শতাংশ! পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে সামগ্রিক ভাবে বৃষ্টি বেশি হলেও সেখানে বঞ্চিত দক্ষিণবঙ্গ। আপাতত খরার আশঙ্কা না থাকলেও ঘাটতির কবলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিকের থেকে ২৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।
মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে সব থেকে কম বৃষ্টি হয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। সেখানে স্বাভাবিকের থেকে ৩৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টি স্বাভাবিকের থেকে ২৩ শতাংশ কম। কম বৃষ্টির হিসেবে শুখা রাজ্য গুজরাত-রাজস্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে পঞ্জাব-হরিয়ানা। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের এক কর্তা এ দিন বলেন, “পঞ্জাব-হরিয়ানায় তবু সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে তা নেই। নেই গুজরাত, রাজস্থানেও। দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকাতেই এ বার স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। তার প্রভাব খারিফ চাষে পড়তে বাধ্য।”
আর সেটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের। বর্ষার ঘাটতি যে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির উপর থাবা বসাতে পারে, তা মানছেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। বৃষ্টির এই ঘাটতি চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা তাঁর। অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, এখন বর্ষার যা ঘাটতি রয়েছে, তাতে কৃষি ক্ষেত্রের বৃদ্ধি কমবে। আর বর্তমানে শিল্পের যা অবস্থা, তাতে তাদের পক্ষে সেই ঘাটতি পূরণ কঠিন। ফলে সব মিলিয়ে বৃদ্ধির হার ধাক্কা খাবে। একই আশঙ্কা বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এরও।
এক আবহবিদের বিশ্লেষণ, ২০০৯ সালের পরে ফের এ বারও দেশে খরা ঠেকানো কঠিন। দেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিকে বৃষ্টির জন্য নির্ভর করতে হয় সমুদ্রে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের উপরে। সেই নিম্নচাপই এ বার তৈরি হল না। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে একযোগে নিম্নচাপের এই আকাল কিন্তু নজিরবিহীন। এই আকালের সঙ্গে ‘এল নিনো’-র সম্পর্কটা কোথায়? এক আবহবিদের মন্তব্য, “আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ‘এল নিনো’র সম্পর্ক রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
পুণের কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অর্ধেন্দু ভূষণ মজুমদার জানাচ্ছেন, “দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরের (ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল) সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেশি না থাকলে নিম্নচাপ তৈরি হয় না। এ বার তাপমাত্রার সেই ফারাকটা তৈরি হয়নি।” ঠিক ওই একই কারণে আরব সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়নি মনে করছেন আবহবিদেরা। ভিলেন হিসেবে ‘এল নিনো’কেই তাই দায়ী করতে চান আবহবিদদের অনেকে।
সব মিলিয়ে মাথায় হাত মাথায় হাত চাষির। কৃষি মন্ত্রকের প্রাথমিক হিসেব, এ বার সারা দেশে ডালশস্য, ভুট্টা, বাজরা, ধান, তুলো এবং তৈলবীজের উৎপাদন কম হবে। দক্ষিণবঙ্গে এ বার ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ করা যাবে না, তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। দেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে খারিফ শস্যের উৎপাদনে ঘাটতি হবে বলেও আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে বিকল্প চাষের জন্য বিশেষ শিবিরও করা হচ্ছে। অন্তত ১০টি অঞ্চলে বৃষ্টির ঘাটতি যে ২৫ শতাংশের বেশি থেকে যাবে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। তার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গও রয়েছে বলে মৌসম ভবন সূত্রের খবর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.