ইনফোসিস প্রকল্প নিয়ে সংশয়ের মেঘ কাটার ইঙ্গিত দিলেন সংস্থার প্রাণপুরুষ নারায়ণ মূর্তি-ও।
গত এপ্রিল মাসে কলকাতায় তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থা। ফলে ইনফোসিসের লগ্নি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে যায়। শুক্রবার ইনফিনিটি গোষ্ঠীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসে সেই সংশয় দূর করে দিলেন নারায়ণ মূর্তি নিজেই। অনুষ্ঠানের শেষে ইনফোসিসের কলকাতার প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি খুবই আশাবাদী। এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বিশ্বের সব বড় সমস্যারই সমাধান সূত্র রয়েছে। আমরা যে সমস্যার সমাধান হয় না বলে ভাবি, সেই সমস্যারও সমাধান রয়েছে।”
২০০৫ সাল থেকে রাজ্যে ইনফোসিসের লগ্নি আটকে রয়েছে। সঙ্গে আটকে ১০ হাজারেরও বেশি ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থানের প্রশ্ন। প্রথমে জমি, পরে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা এই দুই-এর জটে বারে বারে হোঁচট খেয়েছে ইনফোসিস-প্রকল্প। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই রাজারহাটে সংস্থার প্রকল্পের জন্য ৫০ একর জমি ভর্তুকি দিয়ে ৭৫ কোটি টাকায় চূড়ান্ত করা হয়। গত বছর পুরো টাকার বিনিময়ে জমি হাতে পেলেও প্রকল্প নিয়ে এখনও পর্যন্ত এক পা-ও এগোতে পারেনি ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬২ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলারের ব্যবসা করা ইনফোসিস। |
একটি অনুষ্ঠানে নারায়ণ মূর্তি। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে। —নিজস্ব চিত্র |
বস্তুত জমি হাতে পাওয়ার পরেও বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) তকমা নিয়েই দেখা দেয় সমস্যা। ‘সেজ’ নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের নীতিগত আপত্তি রয়েছে। অন্য দিকে ‘সেজ’ তকমা ছাড়া প্রকল্প করতে নারাজ ইনফোসিস। কারণ এই তকমার সৌজন্যে পাওয়া যায় রফতানির উপর ছাড়। মোট ব্যবসার ৯৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক হওয়ায় সংস্থার জন্য এই তকমা জরুরি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এসে নারায়ণ মূর্তি জানিয়েছিলেন, চুক্তির কিছু শর্ত পূরণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ইনফোসিস। রাজ্য সরকার সেই শর্ত পূরণ করলেই পশ্চিমবঙ্গে কাজ শুরু করতে প্রস্তুত তারা। কারণ প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য সংস্থার তুলনায় কম সুবিধাজনক অবস্থায় কাজ করা সম্ভব নয়।
‘সেজ’ তকমা নিয়ে আপত্তি থাকলেও ইনফোসিসকে ধরে রাখার জন্য সমাধান সূত্রের খোঁজে মরিয়া ছিল রাজ্য সরকারও। তকমা ছাড়াই ঘুরপথে সেজ-এর সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ইতিমধ্যেই অনুমোদন পাওয়া বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের মধ্যেই ইনফোসিসকে জায়গা করে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও সাম্প্রতিক কালে ভাবনাচিন্তা করেছে রাজ্য। এ প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে রাজারহাটে শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর সেজ-এ ইনফোসিসকে শরিক করে নেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই সমাধান সূত্র নিয়ে দু’পক্ষই প্রাথমিক ভাবে রাজি থাকলেও পুরো বিষয়টিই এখনও আলোচনার স্তরে রয়েছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে নিম্নবিত্ত পরিবারের ৫০০০ ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নারায়ণ মূর্তি জানান, শুধুই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা নয়, সব স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দিতে বেসরকারি উদ্যোগও জরুরি। তিনি জানান, দেশ জুড়ে বেকার-সমস্যা দূর করতে চাই শিল্প গড়ে তোলার উপযুক্ত পরিবেশ। এ বিষয়ে সরকারকেই সক্রিয় হতে হবে। এ দিন তিনি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষেও সওয়াল করেন। তাঁর দাবি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। |