কোলে দু’বছরের মেয়ে। বাড়ি ফিরছিলেন প্রৌঢ় বাবা। বাড়ির কাছেই তাঁকে ঘিরে ধরল দুষ্কৃতীর দল। কোলে বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে রেহাই দিল না তারা। এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করল। বাচ্চাকে কোনও রকমে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন বাবা। পেটে ও বুকে গুলি লাগে তাঁর। মেয়েকে নিয়েই উপুড় হয়ে পড়ে যান তিনি। দু’হাত দিয়ে শক্ত করে জাপটে ধরে রাখেন মেয়েকে। দুষ্কৃতীর দল চলে যাওয়ার পরে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ বাবা মারা গিয়েছেন ঘটনাস্থলেই। তাঁর দুই হাতের নিরাপত্তায় টিকে গিয়েছে মেয়ে।
তার গায়ে সামান্য আঁচড়। রক্তও লেগেছে সামান্য। তবে বড়সড় কোনও আঘাত লাগেনি। |
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান ফটকের সামনে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম বাবু বাগচি। ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশি প্রহরা ছিল। পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, গুলির শব্দ শুনে তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থলের দিকে দৌড় দিয়েছিলেন। কিন্তু পৌঁছনোর আগেই ৭-৮ জন দুষ্কৃতী মোটরবাইক চালিয়ে পালিয়ে যায়। অন্ধকারে এর বেশি কিছু ঠাহর করতে পারেননি তাঁরা। ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ৫২ বছরের বাবু ছিলেন এলাকায় পরিচিত মুখ। মেয়েকে কোলে নিয়ে বাজার থেকে ফেরার পথে এ ভাবে তাঁকে প্রাণ দিতে হবে, ভাবেননি কেউ। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে থ্রি-নট-থ্রি গুলি পেয়েছে।
স্ত্রী মৌমিতা ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বাবু। তাঁর স্ত্রী মৌমিতাদেবী রাতে জানান, এক সময়ের সিপিএম কর্মী বাবু ইদানীং তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে। চোলাই মদ, লোহা পাচার-সহ বিভিন্ন দুষ্কর্ম চলছে পুলিশের নাকের ডগায়। পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী বাবু তার প্রতিবাদ করতেন। স্থানীয় থানায় সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন তিনি। মৌমিতাদেবী জানান, থানায় অভিযোগ জানানোর পরে বাবুকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সে-কথাও থানাকে জানিয়ে পুলিশের সাহায্য চান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রধানত সেই কারণেই বাবুর বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। |