জাল জমির দলিলের মাধ্যমে লক্ষাধিক লক্ষ টাকার ঋণ দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বালুরঘাটের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সমবায় কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ণ ব্যাঙ্ক। প্রায় ৫ কোটি টাকা অনাদায়ী কৃষিঋণের বোঝা চেপে বসায় রাজ্য সমবায় কৃষি উন্নয়ন ব্যাঙ্কের নির্দেশে প্রায় দু’বছর ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ দেওয়া বন্ধ। এতে ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৮টি ব্লকের চাষিরা। ব্যাঙ্কের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সমীর দে বলেন, “বকেয়া কৃষিঋণ আদায় করতে গিয়ে জালিয়াতি ধরা পড়ে। ভুয়ো কৃষকের নাম ও জমির জাল দলিলের মাধ্যমে বহু টাকার ঋণ তোলা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী কৃষিঋণের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি বালুরঘাটের দু’জন ব্যাঙ্ক কর্মীকে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” ব্যাঙ্কের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক জানান, একমাত্র ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারের মত দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে গত বছর মোট ঋণের ১৫ শতাংশ আদায় করা গিয়েছে। আদায়ের প্রক্রিয়া জারি আছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দীর্ঘ ৩৪ বছর বামেদের হাতেই এই ব্যাঙ্কের পরিচালনার ভার ছিল। সর্বশেষ এই সমবায় কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাস। তাঁর আমলেই ভুয়ো ঋণদানের অভিযোগ ওঠে। ২০১১-র ১১ অগস্ট চিত্তরঞ্জনবাবুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করে বোর্ড ভেঙে দেন রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এর পরেই চিত্তরঞ্জনবাবু কংগ্রেসে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন চিত্তরঞ্জনবাবু। তিনি বলেন, “ঋণ প্রক্রিয়াটি ফিল্ড অফিসার, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এবং চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারদের মাধ্যমে হয়। তাঁরাই তালিকা তৈরি করেন। তালিকা বোডের্র্ পাঠানোর পরে কমিটি ঋণ পাশ করে। এ ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা ছিল না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” বাম আমলে দুর্নীতির খেসারত সাধারণ কৃষকদের দিতে হচ্ছে বলে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমুলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অভিযোগ, “বাম নেতাদের দুর্নীতিতেই ব্যাঙ্কটি দেউলিয়া হয়েছে। জড়িতদের অনেকে গা বাঁচাতে দল পরিবর্তন করে অন্য দলে ঢুকেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলেছি।” সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, মোট ২৪ জন কৃষকের নামে নেওয়া ঋণের নথি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ওই কৃষকদের ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া জমির দলিল ভূমি রাজস্ব দফতরে খতিয়ান যাচাই করে দেখা যায়, এর মধ্যে ১৮ জন কৃষকের দলিল ভুয়ো। এলাকায় গিয়েও ঋণগ্রহীতা কৃষকদের হদিস মেলেনি। মোট ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে চাষের জমি সমতল করার নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কেঁচো সার, পানের বরজ এবং কলা বাগান তৈরির জন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশই জাল নথির ভিত্তিতে ‘ছদ্মবেশী চাষিদে’র ঋণের লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। |