বিনোদন কেবল-এ হারিয়েছে সিনেমা হল
ন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে মধ্যযুগ থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড়ের যমজ শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের খ্যাতি ছিল। ভুবনখ্যাত বালুচরি শাড়ি তৈরির আদি আঁতুরঘরও জিয়াগঞ্জ লাগোয়া বালুচর গ্রাম। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ সহ বিভিন্ন ধর্ম-ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষের বসতিতে সমৃদ্ধ আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জের সেই সু-দিন আর নেই। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ইন্দ্র দুগার, কীর্তন সম্রাজ্ঞী রাধারানিদেবী, বিশিষ্ট অভিনেতা বিধায়ক ভট্টাচার্যের ওই শহরের ৪টি সিনেমা হলেই কয়েক বছর ধরে তালা। একদা বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী লালবাগের এক মাত্র সিনেমাহলটিও এখন বহুতল আবাসন। বাংলাদেশের সীমানা লাগোয়া পদ্মাপাড়ের লালগোলায় কয়েক বছর আগেও সিনেমা হল ও ভিডিও হল মিলে ছিল ২১টি। তার মধ্যে আজ টিকে আছে মাত্র একটি। মহকুমাশহর রঘুনাথগঞ্জেও একটি সিনেমাহল টিকে থাকলেও কর্মীদের কার্যত মাছি তাড়াতে হয়। কিন্তু কেন? সিনেমা হলে সিনেমা চলে না। তার মানে কি সিনেমারই ভবিষ্যৎ অন্ধকার? কয়েকদিন আগে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান শঙ্কর মণ্ডল ও তাঁর ৭ সঙ্গী মিলে কলকাতায় কাজের ফাঁকে সময় কাটাতে আইনক্সে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দেখেন। খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার টাকা। অথচ মাত্র ২০-৩০ টাকার টিকিটের দর্শক না পেয়ে জিয়াগঞ্জের ৪টি সিনেমাহলেই বন্ধ কেন? শঙ্করবাবু বলেন, “কাজ থাকায় ওই দিন পুরোটা না দেখেই চলে আসতে হয়েছিল। কিন্তু জিয়াগঞ্জে ফিরে ওই সিনেমার সিডি ভাড়া করে সপরিবারে মোট ১০ জন মিলে দেখলাম। চা, মুড়ি খেয়ে, গল্পসল্প করে, খাটে শুয়ে, হেলান দিয়ে সবাই মিলে দেখলাম। খরচ হল মাত্র ২০ টাকা। তা হলে কেন সিনেমা হলে যাব বলুন?” প্রায় একই যুক্তি ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক অশোক জৈনের। তিনি বলেন, “নকল সিডি আর কেবল টিভিতে সিনেমা দেখানোর ফলে সিনেমা হলে আর দর্শক হচ্ছে না। দৈনিক বড় জোর এক দেড়শো দর্শক। তাতে খরচই উঠছে না।” কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। এখনও অনেকে সিনেমা দেখতে হলে যেতে চান। তাঁরা চান সুস্থ পরিবেশ, ভাল আসন আর সবাই মিলে একটু বেড়ানোর আনন্দ। যে কারণে বাড়ির পাশের সিনেমা হলে না ঢুকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বহরমপুর ফিল্ম সোসাইটির ‘ঋত্বিকসদন’-এ সিনেমা দেখে তৃপ্ত মনে বাড়ি ফেরেন রঘুনাথগঞ্জ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী সিংহ। জয়শ্রীর মতে, “প্রথমত সিনেমাটির নাম ‘কহানি’। এই ধরনের সিনেমা রঘুনাথগঞ্জের হলে কখনওই দেখানো হয় না। দ্বিতীয় কারণ, সিনেমা হলগুলির ছেঁড়াখোড়া আসন বসার অযোগ্য। সেই সঙ্গে দর্শকদের আচরণও পরিবেশটা নষ্ট করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ঋত্বিকসদন ব্যতিক্রম।” ফলে ঋত্বিকসদনে দেখানো ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘কহানি’, এমনকী ‘রা ওয়ান’ ও ‘বডিগার্ড’-এর মতো সিনেমা ‘হাউসফুল’ই হয়েছে। ওই ফিল্ম সোসাইটির সহ সভাপতি উৎপল গুহ বলেন, “অন্য বাণিজ্যিক হলগুলোর মতো আমাদেরও হিন্দি ও বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে শতকরা ৩০ ভাগ ও বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে শতকরা ২ ভাগ প্রমোদ কর দিতে হয়। ঋত্বিকসদনের আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো, যা অন্য হলগুলির অর্ধেক। তবু এ জেলায় গত আর্থিক বছরে সরকারকে আমরাই সব থেকে বেশি প্রমোদকর দিয়েছি। প্রায় ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা।” বহরমপুর ফিল্ম সোসাইটি’-র অন্যতম কর্তা অরূপ সেন বলেন, “হলের ভিতরে কোনও দর্শক কোনও অসভ্যতা করলে সিনেমা বন্ধ রেখে তাকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে দর্শকের মনে ঋত্বিকসদনের উপর আস্থা রয়েছে। তা ছাড়া এখানে দেখানো সিনেমাগুলিও ভিন্ন স্বাদের ও ভিন্ন মানের।” তবে তারপরেও সিনেমা হলগুলিতে ফের হাউসফুল বোর্ড টাঙানোর সুযোগ রয়েছে। ‘বেঙ্গল মোশন পিকচার্স এমপ্লয়িজ ইউনিয়ান’-এর সদস্য তথা কল্পনা হলের কর্মী মৃণালকান্তি মণ্ডল বলেন, “হল ও আসনের সংস্কার করতে হবে, দর্শকের চাহিদা মেনে সদ্য রিলিজ করা সিনেমা দেখাতে হবে। তবেই তো দর্শক হবে। বিশ্বাস না হয়, এখনই মোহনে যান হাতেনাতে প্রমাণ পাবেন।” সত্যিই, মোহনে ‘রিলিজ’ জিৎ অভিনীত ‘আওয়ারা’ প্রায় হাউসফুলই ছিল। মোহন হলের ম্যানেজার গৌতম ঘোষ বলেন, “জিতের নতুন বই আওয়ারা ভাল চলছে। কয়েক দিন হাউসফুল গিয়েছে।” অর্থাৎ এখনও ওই শিল্পটির পুনরুজ্জীবনের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.