এসটিকেকে রোড
রাজ্য সড়ক না খেত, দেখে ঠাহর করা দায়
সামনে দল বেঁধে এগিয়ে চলেছেন কয়েক জন। পিছনে ধীর গতিতে এগোচ্ছে বাস। কোথাও আবার রাস্তার উপরে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাঁচ-ছ’টি ট্রাক।
এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে কাটোয়ার এসটিকেকে রোডে।
একে তো খানাখন্দে ভরা রাস্তা। সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। বর্ষায় জল জমে তার হাল এখন আরও দুর্বিষহ। কোনও কোনও জায়গায় আবার পিচ উঠে পরিণত হয়েছে কর্দমাক্ত রাস্তায়। কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্বস্থলীর ছাতনি মোড় পর্যন্ত ৬ নম্বর রাজ্য সড়কের এমনই হাল। প্রতিদিনই খারাপ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। যানজট বাড়ছে। বুধবারও কাটোয়া থানার রামদাসপুরের কাছে দু’টি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। যার জেরে আটকে পড়ে অন্তত ২৫টি ট্রাক, কয়েকটি মালবাহী গাড়ি ও বাস। যদিও বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বাস ও মালবাহী ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য পিচ রাস্তার পাশে ইট ও পাথরের গুঁড়ো ফেলে রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছেন। বুধবার এমনটাই করেছিলেন রামদাসপুর গ্রামের যুবকেরা।
রাজ্য সড়কে এসটিকেকে রোডের ওই ১৯ কিলোমিটার রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ, ছোট-বড় গর্ত বছর খানেক ধরেই ছিল।
যানবাহন পারাপার করাচ্ছেন গ্রামবাসীরাই। কাটোয়ার এসটিকেকে রোডে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বর্ষায় তা আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। নিত্যযাত্রী শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিখিল সাহাদের কথায়, “ওই রাস্তা দেখে কে বলবে, ওটা রাজ্য সড়ক! ওই রাস্তা তো এখন খেতজমির চেহারা নিয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।”
দুর্ঘটনা এড়াতে কর্দমাক্ত রাস্তা দেখলেই বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেন চালকেরা। তার পরে ধীরে ধীরে খালি বাস নিয়ে জায়গাটি পার হন। বাস চালক রাম বিলাসের বক্তব্য, “রাস্তার যা হাল, যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কর্দমাক্ত রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বেশি। বাধ্য হয়েই যাত্রীদের নামিয়ে সন্তর্পণে ওই রাস্তা পেরোতে হয়।”
এই রাস্তা-সহ মহকুমার সব রাস্তা সংস্কারের দাবিতে কাটোয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন করছে। রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে দু’দিন বাস বন্ধ করেও রেখেছিল তারা। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। বাস মালিকদের সংগঠনের পক্ষে জানা গিয়েছে, আগে ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৬৭টি বাস চলাচল করত। কিন্তু এখন মাত্র ১২টি বাস চলছে। ওই সংগঠনের নেতা নারায়ণচন্দ্র সেনের ক্ষোভ, “বাসগুলির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। যাত্রীরা ভয়ে বাসে উঠছেন না। এই অবস্থায় বাস চলবে কী করে? দূরপাল্লার বাস চললেও প্রায় সাত দিন ধরে লোকাল বাস চলছে না।”
কলকাতার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া, হুগলি ও বর্ধমানের একাংশের যোগসূত্র এসটিকেকে রোড। অজয়ের বালি থেকে শুরু করে বীরভূমের পাঁচামির পাথর, পাট সবই যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়েই। পূর্ত দফতর (সড়ক)-এর হিসেব অনুযায়ী, ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭৫০টি দশ চাকার ট্রাক-সহ প্রায় ২৫০০টি গাড়ি চলাচল করে। কাটোয়া থেকে ছাতনি মোড় পর্যন্ত রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ায় তা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। সাঁইথিয়া থেকে বালি নিয়ে পূর্বস্থলী যাওয়া কথা ছিল মানজাহার হোসেনের। ওই রাস্তায় তাঁর ট্রাকের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। তাঁর কথায়, “ধুস! এটা কোনও রাস্তা? পুরো রাস্তাটাই দুলতে দুলতে এলাম। হঠাৎই যন্ত্রাংশ ভেঙে ট্রাকটা আটকে গেল।” উল্লেখ্য, ওই রাস্তায় অন্তত পাঁচটি ট্রাক খারাপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “প্রথম থেকেই ঝামা আর ভাঙা ইট ফেলে ঠেকা দেওয়া হচ্ছে। তাই ওই রাস্তার আজ এই দশা। ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য পূর্ত মন্ত্রীকে বার বার বলা হয়েছে।” পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তা সংস্কার নিয়ে বিধানসভার স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে।
পূর্ত দফতরের (সড়ক) কাটোয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য ৩০ কোটির একটি প্রজেক্ট রাজ্য সরকারের দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে দু’এক দিনের মধ্যেই গর্ত বোজানোর কাজ শুরু করব। তার টেন্ডার হয়ে গিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.