প্রাথমিক স্কুলটির দূরত্ব বড়জোড় ২০ মিটার। পাশেই হাইস্কুল। এমন একটি জায়গায় স্কুল চলাকালীন বড় বড় সাউন্ড বক্স বাজিয়ে সভা করে বিতর্কে জড়ালেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।
সাংসদের সভার জেরে সোমবার প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে কোনও ক্লাসই হল না মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুর ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একই অবস্থা ছিল সভা সংলগ্ন প্রতাপপুর হাইস্কুলেরও। এ দিন স্কুল চলাকালীন ওই সভা চলায় ক্লাস নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন শিক্ষকেরাও।
এ দিন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্যোগে শতাব্দী রায়ের সাংসদ এলাকার বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়ার কথা শুনতে বেশ কয়েকটি জায়গায় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতাপপুরের সভাটির মঞ্চ বাধা হয় প্রতাপপুর হাইস্কুলের মাঠ লাগোয়া একটি জায়গায়। সভা মঞ্চ থেকে হাইস্কুল বা প্রাথমিক স্কুল দু’টিই অনতিদূরে অবস্থিত। সভা উপলক্ষে সকাল ১০ টা থেকেই দু’টি বড় বড় সাউন্ড বক্স বাজতে শুরু করে। ১১টার কাছাকাছি শুরু হয় সভা। প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ঢুকতেই দেখে সাংসদের সভা হচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রের ‘নায়িকা’ শতাব্দী রায়কে দেখার জন্য একপ্রকার হুলুস্থুলই পড়ে যায় তাদের মধ্যে। আটকে রাখা যায়নি কাউকেই। এ দিন দল বেঁধে ওই পড়ুয়ারা সাংসদকে দেখতে চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই কোনও ক্লাস হয়নি তাদের। অবশ্য, ওই পড়ুয়ারা সভায় না গেলেও যে এ দিন মাইক-সাউন্ড বক্সের দাপটে কার্যত কোনও ক্লাসই নেওয়া সম্ভব হত না সে কথাও মেনে নিয়েছেন তাদের শিক্ষকেরা। |
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম রায় বলেন, “স্কুলে এসেই দেখি সামনেই মঞ্চ। প্রচণ্ড জোরে সভার সাউন্ড বক্সের আওয়াজ আসছে। ক্লাসঘরে ছেলেমেয়েদের ব্যাগ পড়ে থাকলেও তারা কেউই ক্লাসে ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অধিকাংশই সভার সামনে ভিড় করে বসে আছে। তাদের আর কোনও ভাবে ক্লাসমুখো করা যায়নি।” যে ক’জন পড়ুয়া তখনও স্কুলে ছিল তাদেরও ওই পরিস্থিতিতে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি সে কথাও তিনি জানিয়েছেন। অন্য দিকে, কার্যত একই অবস্থা ছিল হাইস্কুলের এ দিনের পঠনপাঠনেরও। সাংসদের সভার জেরে স্কুলের প্রথমার্ধের ক্লাস নিতে শিক্ষকদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তাদের পড়ুয়ারা সাংসদের সভায় চলে না গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রিয়রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের মাঠের পাশেই সভার মঞ্চ গড়া হয়েছে। সাউন্ড বক্সের আওয়াজে ক্লাস নিতে অসুবিধা তো হচ্ছেই।” অসুবিধার কথা স্বীকার করে ওই স্কুলের শিক্ষক তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “সংগঠকেরা সাউন্ড বক্সের মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেই পারতেন।”
এ ভাবে স্কুল চলাকালীন স্কুলের এতো কাছে সভা করাটা কি ঠিক?
এই প্রশ্নে চোখেমুখে অস্বস্তি ধরা পড়ল খোদ সাংসদের মুখেও। দুনিগ্রামে পরবর্তী সভায় যোগ দেওয়ার জন্য গাড়িতে চাপতে চাপতে শতাব্দী বলেন, “এ বিষয়ে আমার আর কী করার আছে। স্থানীয় নেতৃত্বই এখানে সভার আয়োজন করেছিলেন।” অন্য দিকে, সাংসদ সঙ্গী রামপুরহাট বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এরকম একটি জায়গায় সভা হবে জানলে আমরা আগেই স্থানীয় নেতৃত্বকে বারণ করতাম। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তার জন্য সতর্ক থাকবো।” যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের ভুল স্বীকার করতে রাজি হয়নি। স্কুলের পঠনপাঠনের অসুবিধার কথা উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের রামপুরহাট ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল ঠিক মতোই চলেছে।” আর তৃণমূলের কালুহা অঞ্চল সভাপতি মোজাম্মেল শেখের দাবি, “স্কুলের ক্লাস তো সকালেই হয়ে গিয়েছে।” এ দিকে সব শুনে রামপুহাট ২ নম্বর ব্লকের বিডিও সোমা সাউ বলেন, “এ ভাবে স্কুলের পঠনপাঠনকে ব্যাহত করে সভা হওয়ার কথা নয়। স্কুল পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
ইতিমধ্যেই অবশ্য প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ওই সভার জেরে ক্লাস চালাতে সমস্যা তৈরি হলেও স্কুল পরিচালন সমিতি কেন কোনও অভিযোগ জানালেন না। প্রাথমিক স্কুলের গ্রামশিক্ষা কমিটির সম্পাদিকা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের নার্গিস বেগম বলেন, “বিষয়টির কথা জানতাম না। এ ভাবে ক্লাসের অসুবিধা ঘটিয়ে সভা করাটা কোনও ভাবেই উচিত হয়নি।” আর প্রতাপপুর হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকেরা আমাকে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরিচালন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখবো।”
|